মৌরি ও তানিয়া (ছদ্মনাম) দুই গৃহবধূ ও বান্ধবী। বিজয়ের দিনে ঘুরতে এসেছেন। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রায়েরবাজার বধ্যভূমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণে এসে একটি গাছের নিচে বসে ছবি তুলছিলেন। একে অপরকে বলছিলেন, ‘দ্যাখ দ্যাখ আমার ছবিটা ভালো এসেছে, সূর্যের আলো পড়েছে কম।’
তাদের সঙ্গে কথা হলে জানালেন, তারা অন্যদের মতোই রায়েরবাজার থেকে ঘুরতে এসেছেন। এই জায়গাটাতে লোকজন এখন কম, তাই নিরিবিলি বসে আড্ডা দেওয়া, ঘোরা ও গল্প করা যায়। মনের বিনোদনের খোরাক মেটে। ফলে প্রতি বছর তারা এখানে আসেন।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা উদ্যান থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলছিলেন, দুই মেয়ে সারাদিন ফ্লাটবন্দি। কোথাও যেতে ও বের হতেও পারে না। ফলে আনন্দ বিনোদন থেকে বঞ্চিত। আজ তিনি ছুটিতে, ফলে দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।

তার মতে, এখানে এই দিনটিতে ছাড়াও সরকারি ছুটির দিনে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের সামনে খোলা জায়গায় মেলা বসে। নাগরদোলা, দোলনা, চরকিসহ বিভিন্ন রাইডসে বসে। ফলে শিশুরা এখানে এলে বিনোদন পায়। এছাড়া সৌধ প্রাঙ্গণে নিজের মতো করে ঘোরাফেরা করা যায়।
এমন অনেকের কাছেই একাত্তরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যেখানে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেই স্মৃতি সৌধের স্থানটি বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ঘুরে দেখা গেল, বেশির লোকজনই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে এসে নিরিবিলি বসে গল্পগুজব করছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন, পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করছেন।
রিনা, তুলি ও সোহা তিন বান্ধবী। আগে তিনজনই পড়াশোনা করতেন। কিন্তু এখন আর করে না। বিজয়ে দিনে প্রতি বছর তারা একত্রিত হন এই জায়গায়। আজও এসেছেন। তাদের মতে, অন্য জায়গায় অনেক ভিড়, লোজজনে ঠাসা। ফলে তিন বান্ধবী মন খুলে কথা বলতেই এখানে এসেছেন।

বিপরীত চিত্রও পাওয়া গেল। ধানমন্ডির একটি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা ছোট দুই ভাইও এসেছে। তাদের বাবা আকবর আলী বলছিলেন, আমার ছেলেরা একাত্তরের গল্প শুনেছে, বুদ্ধিজীবি হত্যার কথা শুনেছে কিন্তু তাদের লাশগুলো কোথাও ফেলা হয়েছিল তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন করে। আজ নিয়ে এলাম দেখাতে।
নতুন বিয়ে করেছেন রিয়াজ। থাকেন চাঁদ উদ্যান এলাকায়। তার স্ত্রী গ্রামের মেয়ে হওয়ায় বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে কখনো আসেননি। বিয়ের পর থেকে আসতে চাইতেন কিন্তু সময় জোটে না। বৌকে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি দেখাতেই তিনি তাকে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলছিলেন, তিনি আগে এটা টিভিতে ছবিতে দেখেছেন। আজ সরাসরি দেখলেন। ছবি তুলে স্মৃতি করে রাখলেন।
রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে বিজয়ের দিনে পুরো প্রাঙ্গণকে অনেকে আবার ব্যবসার তীর্থ ভূমি বানিয়ে ফেলেছেন। বসেছে ফুসকা, শশা, খিরা, বেলুন, ঝালমুড়ি, আলুর পাপড়, আচার, খেলনাপাতি, আইসক্রিমসহ নানা পদের দোকান।
এমআইকে/এএইচ

