সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘উপকূল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলবায়ু ঝুঁকির ভার বহন করছে’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘উপকূল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলবায়ু ঝুঁকির ভার বহন করছে’ 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, জলবায়ু বিপন্নতার অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বোঝা বহন করছে উপকূলীয় অঞ্চল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রায়ই ‘প্রাইমারি ব্যাটেলফিল্ড’ হিসেবে দেখা হলেও, উপকূলের পরিচয় শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। 

জিল্লুর রহমান বলেন, উপকূলই একমাত্র অঞ্চল যেখানে কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে; একইসঙ্গে এটি সামুদ্রিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেশের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি।


বিজ্ঞাপন


আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয় সরণিতে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী জাতীয় উপকূল সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিল্লুর রহমান  এসব বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, কৃষক, নারী, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি, উপকূলে কর্মরত সংগঠন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন দীর্ঘদিন ধরে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়াপ্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চলমান কাজ ও সক্ষমতার একটি নতুন মেলবন্ধন তৈরি করেছে।

দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনে আগত সব অংশগ্রহণকারীর আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে সমাপনী অধিবেশনে একটি উপকূল ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। ঘোষণাপত্রে জরিপ ও সমীক্ষার মাধ্যমে উপকূলরেখা ও উপকূলীয় এলাকার প্রকৃত আয়তন, স্বাদুপানি, কৃষিজমি, মৎস্যসম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তথ্য সমন্বয়, ভূমির প্রকারভেদ অনুসারে ‘ল্যান্ড জোনিং’ পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কঠোর পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন, স্থানীয় জেলে-কৃষক-নারী ও তরুণদের ইতিবাচক ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে সমাজভিত্তিক প্রাকৃতিক সম্পদ সহ-ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রদান, লবণাক্রান্ত এলাকাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা, স্বাদুপানির উৎস সরক্ষণ, ভূউপরিস্থিত স্বাদুপানির জলাধার এবং সমাজভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, উপকূলের ঝুঁকি ও চাহিদা বিবেচনা করে স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল, ক্ষতি ও বিনষ্টি তহবিল (এলঅ্যান্ডডি) ও সবুজ অর্থায়ন সহ বিভিন্ন দাবি ঘোষিত হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর দায়িত্ব গ্রহণকারী নতুন সরকারের কাছে দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা এবং উপকূলের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে একটি সবুজ ও কার্বন-নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করার আহবান জানানো হয়। 

গত ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় এই উপকূল সম্মেলনে জল্বায়ু সহনশীলতা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং কমিউনিটি নেতৃত্ব, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, স্থায়িত্বশীল জীবিকা, সামাজিক সুরক্ষা, অন্তর্ভূক্তিমূলক কমিউনিটি বিনির্মাণ, ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর, উদ্ভাবন, সামাজিক সমতা, আর্থিক কাঠামো, প্রাকৃতিক সম্পদ কেন্দ্রিক দ্বন্দ বিষয়ে সমান্তরাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন


অধিবেশনে অতিথি, প্যানেলিস্ট হিসাবে অংশগ্রহণ করেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মহাপরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. এনায়েত উল্লাহ, বন অধিদপ্তর উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির, কোস্ট ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক কোস্ট রেজাউল করিম চৌধুরী, কর্মজীবী নারী অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম প্রমুখ। 

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড নেটওয়ার্ক- প্রান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২৬টি সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কৃষি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, কমিউনিটি সক্ষমতা বৃদ্ধি, জেলে সম্প্রদায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, দুর্যোগ ইত্যাদি বিষয়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষার্থী, উপকূলীয় নানা সংকটের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীসহ আড়াইশো এর অধিক অংশগ্রহণকারী সরাসরি যুক্ত হন।

এমআর/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর