শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নতুন প্রজন্মের কাছে কেবল একটি শোকের দিন নয়; এটি ইতিহাস জানার আগ্রহ, প্রশ্ন তোলা এবং নিজের অবস্থান খোঁজারও একটি উপলক্ষ্য। এমনটি বলছিলেন রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সমাধিস্থলে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী।
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর এলেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে নানা কর্মসূচি ও আলোচনা হয়। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই দিবসকে নতুন প্রজন্ম কীভাবে দেখছে? এটি কি তাদের কাছে কেবল পাঠ্যবইয়ের একটি অধ্যায়, নাকি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার একটি জীবন্ত উপলক্ষ্য?
বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে তাদের ধারণা একরকম নয়। কেউ কেউ এটিকে মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়বিদারক অধ্যায় হিসেবে দেখেন, যেখানে একটি জাতির মেধাবী মানুষগুলোকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ স্বীকার করেন, দিবসটি সম্পর্কে তাদের জানাশোনা সীমিত। মূলত পাঠ্যবই বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই আটকে আছে।
আশিক হাসান নামে একজন বলেন, এই দিবস কেবল অতীত স্মরণের জন্য নয়, বরং বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য ছিল চিন্তা ও মত প্রকাশকে স্তব্ধ করে দেওয়া। সেই প্রেক্ষাপটে আজও মুক্ত চিন্তা, ভিন্নমত ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার গুরুত্ব নতুন করে উপলব্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে।
তরুণদের একটি অংশ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে আনুষ্ঠানিকতার বাইরে এনে বোঝার চেষ্টা করছে। কেউ স্মৃতিসৌধে গিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ আবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও কাজ নিয়ে পড়াশোনা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেক তরুণ নিজেদের ভাবনা তুলে ধরছেন কেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, আর এর ফল আজকের বাংলাদেশ কতটা বহন করছে।
বিজ্ঞাপন

তবে সমালোচনাও আছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, দিবসটি নিয়ে আলোচনা বেশিরভাগ সময় একদিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। বক্তৃতা, পোস্টার ও ফুল দেওয়ার মধ্যেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। ইতিহাসের গভীরতা, বুদ্ধিজীবী হত্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কিংবা এর সঙ্গে বর্তমান সময়ের যোগসূত্র এসব বিষয় খুব কমই আলোচনায় আসে। ফলে নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশের কাছে দিবসটির তাৎপর্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠে না।
সুমাইয়া জাফরিন নামে একজন বলেন, আজকের সমাজে আমরা কি বুদ্ধিজীবীদের যথাযথ সম্মান ও নিরাপত্তা দিতে পারছি? মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গবেষণার সুযোগ ও জ্ঞানচর্চার পরিবেশ কতটা নিশ্চিত? তাদের মতে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রকৃত শিক্ষা এখানেই চিন্তাশীল মানুষদের মূল্য দেওয়া এবং তাদের কণ্ঠস্বর রক্ষা করা।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নতুন প্রজন্মের কাছে ধীরে ধীরে নতুন অর্থ পাচ্ছে। কেউ এখনো দূরত্বে, কেউ আবার গভীর আগ্রহে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করছে। এই প্রজন্ম যদি প্রশ্ন করতে শেখে, ভাবতে শেখে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে মূল্য দিতে শেখে তবেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো সম্ভব হবে।
এম/এএইচ

