আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ দিনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবিসহ নামফলক দিয়ে সাজানো হতো। একযোগে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা এসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম ছবি দেখে তাদের স্মরণ করতেন। তবে, এ বছর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে কোথাও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি-নামফলক দিয়ে সাজানো তাদের স্মৃতি চোখে পড়েনি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
শিশু-কিশোর ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতি বছর আমরা বধ্যভূমিতে এসে বিভিন্ন জায়গায় ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের নাম-ছবি দেখতে পেতাম। আমরা অনেকের নাম জানি না। কিন্তু এখানে এসে সবার নাম পড়ে মুখস্ত করতাম, ছবি তুলতাম। এভাবেই আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করতাম। এবার তেমন কোনো আয়েজন নেই। কোথায়ও কোনো আমেজ নেই। শুধু এসে বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া তাদের স্মরণে আর কোনো আয়োজন নেই।

লালমাটিয়া গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অবনী আহমেদ বলেন, ‘আমি গত কয়েক বছর যাবৎ স্কুলের স্যারদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিতে আসি। এসে দেখতাম এখানে বিভিন্ন জায়গায় ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের ছবি ও নাম দেওয়া থাকতো। আমরা সেখানে ফুলের কলি ছড়িয়ে দিয়ে তাদের শ্রদ্ধা জানাতাম। তবে, এবার আর তাদের ছবি দেখি না। কীভাবে তাদের হত্যা করে বধ্যভূমির ভেতর ফেলে রাখা হয়েছিলো সেই চিত্র এবার নেই। আমাদের অনেকে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের নাম জানি না। ছবি ও নাম দেখে দেখে তাদের স্মরণ করতাম। এবার সেই আয়োজন নেই। কেন করা হয়নি তাও আমরা জানি না।’
বিজ্ঞাপন
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল মোয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর এখানে ফুল দিতে আসি। আজকেও কলেজের সবাই মিলে ফুল দিতে এসেছি। প্রতি বছর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিতে এসে ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া সকল বুদ্ধিজীবীদের ছবি এবং নাম দেখতে পেতাম। পুরো বধ্যভূমি চত্বরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেসব ছবি থাকতো। আমাদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সেসব ছবিতে তাদের দেখতে পেতেন। কিন্তু এ বছর এসব কোনো কিছুই নেই। আমরা কোথায়ও কোনো স্মৃতি দেখতে পাই না। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি নেই, যারা শহীদ হয়েছে তাদের নাম নেই। আমাদের মধ্যে অনেকে শিক্ষক, চাকরিজীবী কিংবা অনেকেই শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের নাম জানে না। কীভাবে তাদের হত্যা করে শহীদ করা হয়েছে, সেই ইতিহাসও অনেকে জানে না। একেবারে খামখেয়ালীভাবে এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছে মনে হলো।

এদিকে, বুদ্ধিজীবী দিবসে এলাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি কিংবা নাম অথবা সাংস্কৃতিক কোনো আয়োজন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক বাসিন্দা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তবে, এসব বিষয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির সংশ্লিষ্ট কিংবা গতপূর্ত বিভাগের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
একেএস/এফএ

