শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাদির ওপর গুলি চালানোর আগে অফিস রেকি করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

Hadi
বামপাশের ছবিতে হাদির অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেকি করা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কবির। ডান পাশে তার ফাইল ছবি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার আগে ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ অফিস রেকি করতে দেখা যায় আদাবর এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে। 

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে এবং অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে কারও বের হওয়ার অপেক্ষা করতে দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, রেকি করা ওই ব্যক্তি আদাবর এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবির। তিনি আদাবর এলাকার নবোদয় হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং দ্বিতীয় প্রকল্প ও বেড়িবাঁধ এলাকার ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত।
 
‎হাদির অফিস রেকি করার সময় কবিরের পরনে একটি ছাঁই কালার হুডি ও সাদা কালারের প্যান্ট এবং পায়ে চামড়ার জুতা দেখা যায়। তিনি লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে একবার সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দ্রুত অফিসে প্রবেশ করেন। যেখানে তার চেহারা পুরোপুরি বোঝা যায়। 

Killer_20251213_123006964
ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল।

‎হাদিকে গুলি করার আগে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলের (যিনি মুখে চশমা,কালো হুডি ও পরনে জিন্স প্যান্ট পড়া ছিলেন) সঙ্গে দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায় কবিরকে। ‎


বিজ্ঞাপন


‎অনুসন্ধানে জানা যায়, আদাবর এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার মোল্লার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল। কাওসার মোল্লা আদাবর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসিন মোল্লার ছেলে। যিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের একান্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।‎

আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ আরেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার মোল্লা মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ইসহাকের আপন বড় ভাইয়ের ছেলে। এছাড়া দাঁতভাঙা কবির আদাবর এলাকার যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী রোজি জয়িতার ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। রোজি আবার জাহাঙ্গীর কবির নানকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যা নিয়ে বিগত সরকারের আমলে আদাবর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছিল।‎

‎এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে খবর, ওসমান হাদিকে গুলি করা যুবক ফয়সাল করিম মাসুদের গ্রামের বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে। তার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। স্থায়ী ঠিকানা বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, কেশবপুর কলেজের পাশে। মাসুদের বাবার নাম হুমায়ুন কবির।‎

‎পুলিশের পিসিআর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ফয়সাল করিম মাসুদ ঢাকার আদাবর থানার পিস কালচার হাউজিং সোসাইটি (বাসা নং-৪১, রোড নং-০৯)-এ বসবাস করতেন। তার বিরুদ্ধে আদাবর থানায় মামলা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।‎

01
বামপাশের ছবিতে হাদিকে গুলি করার পর রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তার দুজন সঙ্গী।

ফয়সাল করিম মাসুদের পিসিআর রিপোর্টের তথ্য ও ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে ধরতে বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় হাদিকে মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি অনুসরণ করে। এক পর্যায়ে তাকে বহনকারী অটোরিকশার কাছে গিয়ে তার মাথার কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে তারা পালিয়ে যায়।

গুরুতর অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে একটি অপারেশন শেষে তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তবে বিপদমুক্ত নন।

জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম ইনকিলাম মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি। হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও টকশোতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে তুলেধুনা করতে দেখা গেছে তাকে।

ফলে ঘাতকদের বন্দুকের নিশানায় বহুদিন ধরেই ছিলেন হাদি। বিদেশি নাম্বার থেকে সম্প্রতি তাকে কয়েকবার হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে ভীত হননি হাদি। কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চালাচ্ছিলেন নির্বাচনি কার্যক্রম।

‎একেএস/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর