শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘আমাদের দাবি ধীরে ধীরে নির্বাচনের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আমাদের দাবি ধীরে ধীরে নির্বাচনের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে’
সম্প্রতি রাজপথে বিভিন্ন দাবিতে চলে আন্দোলন। ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষক, চাকরিপ্রত্যাশী এবং প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবস্থান, মানববন্ধন ও কর্মসূচি এখন নির্বাচনের উত্তাপে স্থবির হয়ে যাবে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভোটের সময় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নজরদারি এত বাড়ে যে তাদের দাবিগুলো ধীরে ধীরে নির্বাচনের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আইন মেনে চলা জরুরি, অন্যথায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজপথে চলমান আন্দোলনগুলোর নেতারা বলছেন, নির্বাচনী উত্তাপে সাধারণ মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়, প্রশাসন শুধু ভোটের নিরাপত্তায় মনোযোগ দেয়। ফলে তাদের দাবি, যেগুলো বাস্তবায়নের জন্য বহুদিন ধরে আন্দোলন চলছিল, তা ভোটের ভেতরে চাপা পড়ে যায়। একটি আন্দোলনকারী বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের জন্য স্থান, অনুমতি বা সুযোগ পাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের আন্দোলনও ভোটের ভেতরে হারিয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে রাজধানী ও প্রান্তিক অঞ্চলের অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাস্তায় অবস্থান করছেন। বেতন কাঠামো, পদোন্নতি, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা ও প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির দাবিতে তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকেন। একজন আন্দোলনরত শিক্ষক বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আমাদের মধ্যে অনেকটা হতাশা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের সময়ে পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি এতটাই বাড়ে যে আমরা প্রতিদিনের মতো অবস্থান নিতে পারি না। আমাদের দাবিগুলো এখন ভোটের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষকরাও দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বেতন, কাঠামো পরিবর্তন ও পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতিক্রিয়াও একই রকম। তারা বলেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসন সবকিছু স্থগিত করে দেয়। ভোটের উত্তাপে বড় জমায়েত ও মানববন্ধন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের আন্দোলন ধীরে ধীরে নির্বাচনের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে, এমনটাই মনে হচ্ছে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধনের সনদধারী নিয়োগবঞ্চিতরাও এই সময়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, নির্বাচন আসলে সব পদক্ষেপ থমকে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জন্য যা পরিকল্পনা হয়েছিল, তা ভোটের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় বড় কোনো জমায়েত করা বা দাবি আদায়ের কার্যক্রম চালানো এখন কঠিন হয়ে পড়বে।

১৮তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরাও তাদের প্রতিশ্রুত নিয়োগ এবং চাকরির অধিকার নিয়ে ভাবনায় আছেন। তারা বলেন, নির্বাচন শুরু হলেই সব প্রশাসনিক কাজ স্থগিত হয়ে যায়। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া এবং দাবি এখন ভোটের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে। ভোট শেষ হওয়ার পরই হয়তো নতুন করে এগোতে পারব।


বিজ্ঞাপন


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের জন্য স্পষ্ট সতর্কবার্তা এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর কোনো ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। তিনি জানান, অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুই হাজার আন্দোলন হয়েছে, তবে একবারও রাবার বুলেট ছোড়া হয়নি, শুধু টিয়ারশেল এবং গরম পানি ব্যবহার করা হয়েছে। শফিকুল আলম আরও বলেন, আগামীকাল মেট্রোরেলের আন্দোলনের ক্ষেত্রে, তফসিল ঘোষণার পর যারা কোনো ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ যদি আইন না মানে তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে যে বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক হবে, আমরা সেগুলো নিশ্চিত করবো। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছাও থাকা দরকার।

এএইচ/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর