সরকারি আদেশ অমান্য করে সচিবালয়ে কর্মরত চাকরিজীবীদের ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে অন্তত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় সচিবালয় থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ২০ শতাংশ ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ও করে নিয়েছেন। তবে এখনও সরকারি আদেশ জারি হয়নি। তাই ফের আন্দোলনে নেমেছে কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবারও সচিবালয়ে আন্দোলন করেন তারা।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজকের মধ্যে সরকারি আদেশ জারি না হলে, আগামী সপ্তাহ থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবেন তারা। এর আগে, গতকাল একই দাবিতে প্রায় ৬ ঘণ্টা অর্থ উপদেষ্টাকে আটকে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। পরে কড়া পুলিশি পাহারায় তিনি রাত ৮টার দিকে বের হন। এর আগে, আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণে আগামী সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি হবে– এমন বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা মানেননি।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং উপদেষ্টাকে মুক্ত করতে গতকাল রাত ৮টার কিছু আগে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়।
ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের যুগ্ম কমিশনার সানা শামীনুর রহমান বলেন, ‘রোববার থেকে সচিবালয় বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এ মুহূর্তে আমরা এই অন দ্য স্পট চারজনকে আটক করেছি এটা আপনারাও দেখেছেন। এখানে আমরা যাচাইবাছাই করে দেখব কার কতটুকু দায় দায়িত্ব রয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে গতকালের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। আপনাদের কাছেও রয়েছে যারা সাংবাদিক ছিলেন। আপনারা গতকালও আমি দুইবার তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করার জন্য বলেছিলাম। তারা কিন্তু সেই বিষয়টি আমলেই নেয়নি। সুতরাং আমরা এই মুহূর্তে যাদের নেওয়া হয়েছে অন দ্য স্পট, যারা আইন ভঙ্গ করেছেন আমরা বেছে বেছে তাদের কয়েকজনকে নিয়েছি। এইটা যদি অব্যাহত থাকে যত মানুষ আইন ভঙ্গ করবে আমরা সবাইকে আইনের আওতায় আনব।’
সানা শামীনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে যতগুলো কেপিআই রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কেপিআই হচ্ছে বাংলাদেশ সচিবালয়। আপনারা জানেন যে, বিগতদিনে এখানে কর্মচারীর নামে যারা উচ্ছৃঙ্খলতা করেছেন। সেসব ঘটনা আপনাদের সবারই জানা আছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা গতকাল রাতেও তাদের অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু তারা প্রশাসনের কোনো কথা শোনে নাই। তারা হুমকি-ধামকি অব্যাহতভাবে দিয়ে চলেছে। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। এখানে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করার অনুমতি নাই।’
তিনি বলেন, ‘এটি কেপিআই হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দিষ্টভাবে সার্কুলার দিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টসহ যমুনা যেটি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন সেখানে মিছিল, মিটিং রাজনৈতিক কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা গতকাল এবং আজকেও এই মেসেজটি তাদের দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে আপনারা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এখানে সৃষ্টি করবেন না। যাতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ জাতীয় কোনো কর্মকাণ্ড আপনারা করবেন না।’
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘গতকালও তারা আইন ভঙ্গ করে এখানে অর্থ উপদেষ্টাকে জিম্মি করে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা করেছে। এটিকে আমরা ভিন্ন অর্থে বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র কিনা সেটি ক্ষতিয়ে দেখছি। আজকে আপনারা দেখেছেন আমরা তাদের বিভিন্নভাবে গতকালকে মেসেজ দেওয়া এবং উপদেষ্টা এবং সচিব বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও তারা এগুলো কর্ণপাত করেন নাই এবং কাউকে উনারা ঠিক রেসপন্স করেন নাই। ঠিক ওই অর্থে প্রশাসনের কোনো কথাই তারা কর্ণপাত করেননি। তো আজকে আবার যখন তারা একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছে আমরা তাদের সময় দিয়েছি। আপনারা দেখেছেন আমি নিজেও ঘোষণা দিয়েছি তারা সেখানে কর্ণপাত করেননি। তারা এ ধরনের মিছিল অথবা সমাবেশ যেটা বেআইনি কর্মকাণ্ড সেই বেআইনি কর্মকাণ্ড তারা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কোনোভাবেই কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড কোথাও একসেপ্ট করবে না। আপনারা এর আগেও দেখেছেন আমরা এখনও আপনাদের মাধ্যমেই বলতে চাই যতগুলো কেপিআই রয়েছে বিশেষ করে যমুনা, সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এবং যখন কমিশনার স্যার সার্কুলার দিয়ে যেসব এলাকায় মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশ শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেন। ওইসব এলাকায় যাতে আপনারা কোনো ধরনের আইন ভঙ্গ না করেন; সেজন্য আমি আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে এ মেসেজটি দিতে চাই যে, আইন আপনারা কেউ হাতে তুলে নেবেন না। বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যার কিন্তু সমাধান করে যাচ্ছে। যেকোনো সমস্যার সমাধানের একটি লিগ্যাল পথ রয়েছে। কিন্তু আপনি যখন যানবাহন চলাচল বন্ধ করেন, পথচারীদের বিঘ্ন সৃষ্টি করেন, মানুষের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ান, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সেখানে যখন আপনি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেন, তখন অবশ্যই আইন তার নিজস্ব পথে চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। সে যেই হোন, যত বড় ক্ষমতাশালী হন না কেন, আইন যিনি ভঙ্গ করবেন তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
বিইউ/এফএ

