বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গ্রিসে চাকরি দেওয়ার নামে লিবিয়ায় পাচার, মুক্তিপণ আদায়, গ্রেফতার ১

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্রিসে চাকরি দেওয়ার নামে লিবিয়ায় পাচার, মুক্তিপণ আদায়, গ্রেফতার ১

গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে লিবিয়ায় পাচার, শারীরিক নির্যাতন এবং দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির মানব পাচার ইউনিট (টিএইচবি)। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)। তিনি সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার থানার মোজাফফর আলীর ছেলে।

বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সিআইডির একটি সূত্র।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চক্রটির গ্রিসপ্রবাসী অন্যতম সদস্য শরীফ উদ্দিন ২০২৪ সালে দেশে এসে মামলার বাদী ও আরেক ভুক্তভোগী যুবককে গ্রিসে লোভনীয় বেতনের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকা চুক্তি হলে প্রাথমিকভাবে দুজনই পাসপোর্ট এবং দুই লাখ টাকা করে শরীফ উদ্দিনকে দেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে শরীফ উদ্দিন তাদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই, সেখান থেকে মিশর হয়ে লিবিয়ায় পাঠান।

লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর চক্রের মনোনীত ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করেন এবং পরে একদল মাফিয়ার হাতে তুলে দেন। সেখানে তাদের কাছ থেকে ডলার ও ইউরো ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং বন্দী রেখে শারীরিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দেশে বসে চক্রের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী গ্রেফতারকৃত নজির ও অন্যান্য সহযোগীরা দুই ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেন। এক ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে মোট ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং অন্য ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার পরও ভুক্তভোগীদের মুক্তি না দিয়ে লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে তারা ৪৫ দিন কারাবন্দী থাকার পর চলতি বছরের ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম–এর সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে টাকা চাইলে চক্রের সদস্যরা তা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং নানা ভয়ভীতি দেখান।


বিজ্ঞাপন


গ্রেফতারকৃত নজির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভুক্তভোগীদের ইউরোপ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠাতেন। উচ্চ বেতনের চাকরির কথা বলে ১৯ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ৯ জনকে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে; বাকিরা এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছে আটক আছেন।

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ডিএমপির ডেমরা মডেল থানায় দায়ের করা আরেক মামলায়ও নজিরের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি। মামলার এজাহারে বলা হয়, চক্রের অন্যতম সদস্য বাহাদুর ফারাজীর (৫৫) সঙ্গে ভুক্তভোগীর মোবাইলে পরিচয় হয়। গ্রিসে লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব দিলে ভুক্তভোগী রাজি হয়ে তাকে পাসপোর্ট ও নগদ ৮ লাখ টাকা দেন।

যেভাবে লিবিয়ায় পাচার করা হয়েছিল
চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজির ভুক্তভোগীকে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করেন। পরে দুবাই ও মিশর হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছালে চক্রের আরেক সদস্য তাকে গ্রহণ করে বেনগাজির একটি বাড়িতে আটকে রাখে। শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। নজির ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ১১ লাখ টাকা নেন। মুক্তিপণ পাওয়ার পর লিবিয়ায় থাকা সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে মরুভূমিতে ফেলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দেশে ফিরে তিনি ডেমরা থানায় মানব পাচার আইনে মামলা করেন। এ মামলায় এর আগে চক্রের আরও একজন সদস্যকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

দুটি মামলা ছাড়াও গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ নজির হোসেন বিমানবন্দর থানার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দুই মামলার অভিযোগের বিষয়টিও স্বীকার করেছেন।

এমআইকে/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর