রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ ও মেয়ে নাফিজা বিনতে আজিজকে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, একেবারে ক্লুলেস একটা হত্যাকাণ্ড। একবছর আগে মোহাম্মদপুর এলাকায় আরেকটি চুরির ঘটনায় থানায় জিডি ও মুখে পোড়া দাগকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী আসামিকে শনাক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) এসএন নজরুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মী আয়শাকে শনাক্ত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে, মুখ ঢেকে আসা–যাওয়া করত। এমন অবস্থায় তাকে শনাক্ত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। তাকে শনাক্ত করতে আমরা মোহাম্মদপুর এলাকায় গত ১ বছর আগে একটি চুরির ঘটনায় থানায় জিডিকে কেন্দ্র করে তার মোবাইল নম্বর খুঁজে পাই। এরপর বিভিন্ন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তার স্বামীকে শনাক্তের পর তাকে শনাক্ত করি।’
এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গৃহকর্মী আয়েশা হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন আগে এ বাসায় কাজ শুরু করে। কাজের ২য় দিন সে বাসা থেকে ২ হাজার টাকা চুরি করে। এ নিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর তৃতীয় দিন কাজে আসলে এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর কাজের চতুর্থ দিন সে কাজে আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই সময় বাড়ির মালিক গৃহকর্মী আয়েশাকে আটকে তার স্বামীকে ফোন দিতে চাইলে তার ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এরপর মেয়ে নাফিজা বিনতে আজিজ ছুটে আসলে তাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের গুরুতর আহত করে গৃহকর্মী আয়েশা বাসায় থাকা ২টা ল্যাপটপ, ১ টা মোবাইল ও অনেক মালামাল নিয়ে যায়।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘সে হত্যার পর নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করে। এরপর নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এই সময়ে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ–ফোন নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে। তৃতীয় দিন টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্তীর সঙ্গে তার তর্ক হয়। চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে তর্ক হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আফরোজা ফোনে তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পিছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঘাতক গৃহকর্মী। এ দিকে একই সময়ে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলে। আয়েশার ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
একেএস/এমআই

