মহেশখালী–মাতারবাড়ি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা (মিডি): বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে জাইকার পুনঃআধিপত্য’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ক্লিনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে, জাপান সমর্থিত ‘মিডি’ পরিকল্পনা স্থানীয় জীবন, পরিবেশ, অর্থনীতি ও প্রশাসনের ওপর বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচিত স্থানীয় সরকারকে উপেক্ষা করে মিডা নামের একটি বিকল্প কর্তৃপক্ষ কার্যত প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত দেখা দিয়েছে।
জাপানি অর্থায়ন ও প্রযুক্তি–নির্ভর এলএনজি প্রকল্প বেছে নেওয়ায় বাংলাদেশের শিল্প ভবিষ্যৎ অস্থির আন্তর্জাতিক গ্যাসবাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ইতোমধ্যে গ্যাসের মূল্য ১৭৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি—এটির ঝুঁকি আরও প্রকট করে তুলছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিডি এলাকায় এলএনজি ও জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণের ফলে ১৩০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হতে পারে। কোহেলিয়া নদী ভরাট ও জলপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতি স্পুন-বিল্ড স্যান্ডপাইপারসহ বহু জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
বিজ্ঞাপন
মিডি প্রকল্পের জন্য ১২,৯৫১ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। লবণ চাষ ও চিংড়ি খামার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়ায় স্থানীয়দের ৩০% পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ:
১. স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে মিডা অর্ডিন্যান্স বাতিল।
২. কয়লা–এলএনজি নির্ভর বর্তমান মিডি মহাপরিকল্পনা বাতিল।
৩. অঞ্চলের সম্ভাবনাময় সৌর ও বায়ু শক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৪. নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণসহ স্বতন্ত্র স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট (SEA) পরিচালনা।
৫. কোহেলিয়া নদী পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ সুরক্ষায় ইকোলজিক্যাল ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. স্বচ্ছ পুনর্বাসন কাঠামো প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ বন্ধ।
বিডব্লিউজিইডি–এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, জাপান-সমর্থিত মহেশখালী-মাতারবাড়ি অবকাঠামো উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা একটি জটিল ফাঁদ, যা বাংলাদেশের জমি, সম্পদ ও সার্বভৌমত্বকে শোষণ করছে। স্থানীয় মানুষকে পরিবেশগত ও ঋণজনিত বিপদের বোঝা বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনের বরাতে ক্লিন জানায়, এসব ঝুঁকির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও স্থানীয় মানুষের অধিকার রক্ষার দাবি নিয়ে গত বুধবার মহেশখালী–মাতারবাড়িতে ক্লিন, সংশপ্তক ও বিডব্লিউজিইডি–এর যৌথ উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এমআর/এএস

