বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঢাকায় আনা হয়েছে মা-মেয়ে খুনে গ্রেফতার আয়েশাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

ayesha
মা-মেয়ে খুনে গ্রেফতার গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি- সংগৃহীত

ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান অভিযুক্ত গৃহকর্মী মোছাম্মৎ আয়েশা এবং তার স্বামী জামাল শিকদার রাব্বিকে। 

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাদের মোহাম্মদপুর থানায় নেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মোহাম্মদপুর জোনের এসি আব্দুল্লাহ আল মামুন। 

তিনি জানিয়েছেন, ‘আয়েশা ও তার স্বামী বর্তমানে মোহাম্মদপুর থানা হেফাজতে আছে।’

এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের একটু আগে জোড়া খুনে অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামীকে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


তার আগে গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সপ্তম তলায় নিজ বাসায় গৃহিণী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান গৃহকর্মী আয়েশা। 

সেদিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে ওই বাসা থেকে লায়লা আফরোজের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে নাফিসা বিনতে আজিজের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে ওই দিনই ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত নাফিসার বাবা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক।

picture_

মামলার এজাহারে আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ৪ দিন আগে আসামি আমার বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। সোমবার সকাল অনুমানিক ৭টার দিকে সময় আমি কর্মস্থল উত্তরায় চলে যাই। পরে আমার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। আমি নিরুপায় হয়ে বেলা অনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফেরত এসে দেখি, আমার স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা, রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এবং আমার মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাসার মেইন গেটে পড়ে আছে। আমার মেয়ের এই অবস্থা দেখে দ্রুত আমি তাকে উদ্ধার করে পরিছন্নতাকর্মী মো. আশিকের মাধ্যমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে তিনি আরও বলেন, আমি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখতে পাই, আসামি ওইদিন সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে কাজ করার জন্য বাসায় আসে এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আমার মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়।

এদিকে মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ঢাকাসহ সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি ওঠে। হত্যাকারীকে গ্রেফতারে তৎপর হয় পুলিশ। অবশেষে বরিশাল থেকে ধরা পড়ে হত্যাকারী।

হত্যার শিকার মা-মেয়ে দুজনের সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিহত আফরোজার শরীর জুড়ে ৩০টি জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫) এর গলায় চারটি গভীর আঘাতের ক্ষত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এমন সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেখেননি। হত্যার ধরন ও নৃশংসতা দেখে ঘাতককে প্রশিক্ষিত বলে ধারণা করেন কর্মকর্তারা।

হত্যার কারণ হিসেবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাসার মালামাল চুরি করে নেওয়ার সময় মা লায়লা আফরোজের কাছে ধরা পড়েন মাত্র চার দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী আয়েশা। একপর্যায়ে লায়লা আফরোজ তাকে আটকে পুলিশে ফোন দিতে গেলে আয়েশা ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করেন।

এসময় মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে মেয়ে নাফিজা বিনতে আজিজ দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এসে মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। তখন ঘাতক গৃহকর্মী তাকেও ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর স্কুলড্রেস পরে পালিয়ে যান। 

এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর