বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের পাওনা ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ এবং তার ছেলে ফারুক আজম খানের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান ও তার ছেলে ফারুক আজম মালিকানাধীন সিটি হেলথ কেয়ারের ব্যানারে বার্ডেম আউটডোর ও ইনডোর এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) ফার্মেসীর সঙ্গে প্রায় ৫০টি ঔষধ কোম্পানি ক্রেডিট পলিসিতে ব্যবসা করে আসছিল। এই ক্রেডিট সুবিধার মাধ্যমে সমসাময়িক সময়ে তাদের ৫০টি ঔষধ কোম্পানির প্রায় দশ কোটি টাকা ক্রেডিট বকেয়া পড়ে এবং তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।
তারা বলেন, পরবর্তীতে ডা. এ কে আজাদ খান মালিকানাধীন বাডাস ফার্মেসীর পরিচালক ফারুক আজম খান কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে ফার্মেসী বন্ধ করে দেন এবং বার্ডেম কতৃপক্ষ তাকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য সমস্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান এবং তার ছেলে ফারুক আজম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দফায় দফায় স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও তারা শুধু বিভিন্ন ডেট প্রদান করেন, কিন্তু টাকা না দিয়ে নানা কৌশলে সময়ক্ষেপণ করেন। এক পর্যায়ে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির দ্বারস্থ হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বাপি) এই আদায়ের সহযোগিতার জন্য বার্ডেম ও বাডাস ফার্মেসীর কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রদান করে।
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বাপি) দেওয়া এই চিঠিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় এবং পাওনা টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় সব ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগণ চাকরি হারানোর হুমকিতে পড়েছেন। ফলে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য ১৬ নভেম্বর প্রেসক্লাবে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে বাধ্য হন। অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান টাকা পরিশোধের জন্য সাতদিন সময় নিয়ে এখন পর্যন্ত টালবাহানা করছেন। এমনকি সম্প্রতি তারা জানতে পেরেছেন, তিনি নতুন করে কৌশলে বাডাসের মহাসচিব ছাইফুদ্দিনকে দিয়ে ফার্মেসী পুনরায় চালু করছেন। বিষয়টি একরকম ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পূর্বঘটনার পুনরাবৃত্তির লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল ফার্মার প্রতিনিধি এম এ লতিফ বলেন, টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে চাপ প্রয়োগ করেছি। এক পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়, কিন্তু এখন টাকা না দিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। বকেয়া টাকা না পেয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ চাইলেও চাকরি ছাড়তে পারছেন না, কারণ পূর্বের টাকা পরিশোধ না করলে চাকরি ছাড়তে হবে। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই বিনা বেতনে চাকরি করছেন।
বিজ্ঞাপন
বেক্সিমকোর সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার জাকির হোসাইন বলেন, বাডাস আমাদের সঙ্গে অন্যায় ও অবিচার করছে। আমরা জীবন-জীবিকার হুমকির মুখে আছি। ৫০টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা চাকরি হারানোর পথে রয়েছেন।
হেলথ কেয়ার ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের পাওনা টাকা চাই। তিন বছর ধরে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। আমরা ভদ্রভাবে টাকা চাই, কোনো ধরনের মামলা মোকদ্দমায় যেতে চাই না, আপসের মাধ্যমে আদায় করতে চাই। যদি এইভাবে টাকা না দেওয়া হয়, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাব, যাতে আমাদের টাকা দেওয়া হয়। অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা আমাদের পাওনা চাই এবং বাড়াবাড়ি করতে চাই না।
এসএইচ/এআর

