রাজধানীর পল্টন থেকে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে র্যাবের কটি, হ্যান্ডকাফ ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করে করা হয়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর উইং কমান্ডার এজেএম ইন্তেখাব চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া র্যাব পরিচয়ে সংঘটিত ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের অপরাধ শুধু জননিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং র্যাবের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। র্যাব ফোর্সেস এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জনগণকে সচেতন থাকতে এবং সন্দেহজনক কোনো আচরণ দেখলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ডাকাত দলের সদস্যদের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে তাদের মাইক্রোবাসটি র্যাবের টিম পল্টন মডেল থানার ভিআইপি রোড এলাকায় থামায়। এসময় তারা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে মাইক্রোবাসে থাকা ছয়জন ব্যক্তি নিজেদের র্যাব পরিচয় দেন। তবে পরিচয়পত্র যাচাই করে তারা ভুয়া প্রমাণিত হয়।
পরবর্তীতে তাদের আটক করে মাইক্রোবাসটি তল্লাশী করা হয়। এসময় র্যাব লেখা চারটি কটি ও চারটি ক্যাপ, র্যাবের ভুয়া আইডি কার্ড পাঁচটি, হ্যান্ডকাফ দুটি, ওয়াকিটকি সেট দুটি, পিস্তলের কভার একটি, ব্যাটন স্টিক একটি, অতিরিক্ত নম্বর প্লেট দুটি, স্মার্টফোন পাঁচটি, বাটন ফোন চারটি, এয়ারপড একটি, হ্যান্ড গ্লাভস এক জোড়া, হাতঘড়ি চারটি, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত সিলভার-পার্ল রঙের মাইক্রোবাসটি উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শহিদ মাঝি, মামুন ও মিজানদের পরিকল্পনামতে জুয়েল বিশ্বাস ও মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু পূর্বেও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে দেশে বিভিন্ন স্থানে আবুল কালাম আজাদের চালিত মাইক্রোবাস ব্যবহার করে ডাকাতি ও দস্যুতা করে আসছিল।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া শহিদ মাঝি ও মামুন ফোন করে রাজধানীর পল্টনস্থ আনন্দ ভবনের সামনে তাদের একত্রিত করে এবং মিজানের কথামতো আসামি মো. আবুল কালাম আজাদ একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আসে। তারা মাইক্রোবাসে ওঠে এবং মাইক্রোবাসে মামুনের দেওয়া জব্দকৃত আলামত দেখতে পায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা মাইক্রোবাসে উঠে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতারকৃত মো. জুয়েল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ মোট ১৫টি মামলা, আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপুর বিরুদ্ধে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনের মামলাসহ মোট ১৫টি মামলা, সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ মোট ৬টি মামলা, আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মাদকসহ মোট ৬টি মামলা এবং বোরহান মিয়ার বিরুদ্ধে মাদক আইনের মোট ৪টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া এর আগে জুয়েল বিশ্বাস মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১৬ লাখ টাকা ডাকাতি করে এবং সেই মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। রাজধানী পল্টন থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক জনকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ডাকাতি করে, যার ফলে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা হয়।
গ্রেফতাকৃত জুয়েল বিশ্বাস চক্রটির নেতৃত্ব দিতো। তিনি নতুন সদস্যদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ডাকাত দলে যুক্ত করতেন এবং ডাকাতিতে অংশ নিতে বাধ্য করতেন। গ্রেফতারকৃত জুয়েল বিশ্বাস গত ২৭ নভেম্বর ও সাজ্জাদ হোসেন গত ২৯ নভেম্বর এবং আবুল কালাম আজাদ গত দুই বছর আগে জেল থেকে জামিনে বের হন।
এমআইকে/এএইচ

