বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২২, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে সেঙ্কশন দিয়েছে— এই সেঙ্কশনের ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বিরাট বাধা আসছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার দেওয়া নিষেধাজ্ঞা (সেঙ্কশন) ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮তলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে— যখন সারাবিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সেই সময়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে ফেলে। বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে সেঙ্কশন দিয়েছে— এই সেঙ্কশন দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু বাধাই না, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাবো, সে প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে সারা বিশ্ব এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

‘মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আসলে সকলের, অন্তত উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার বিবেচনা করা উচিত তারা যে সেঙ্কশন দিচ্ছেন— তাতে তাদের দেশের লোকও যে কষ্ট পাচ্ছেন। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেঙ্কশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব দেশের সাধারণ মানুষ। সেই উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ অর্থাৎ সকল দেশের মানুষই— যারা নিম্ন আয়ের সব দেশ কষ্ট পাচ্ছে।

‘করোনা মহামারি থেকে কেবল একটু উদ্ধার পাচ্ছি, তখনই এই যুদ্ধ আর সেঙ্কশন’ বলে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এটা সত্যি আমাদের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি মনে করি— সেঙ্কশন দিয়ে কখনও কোনও দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। এর প্রভাব তার নিজের দেশের ওপরও পড়ে। কাজেই এই সেঙ্কশন তুলে দেওয়া এবং পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্র অবারিত করা হোক— যুদ্ধ যারা করার করতে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন বা আমদানি-রফতানি এটা সহজভাবে হওয়া দরকার। আর সাধারণ মানুষ যেনও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। আর সেখানেই সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও।

 সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে যে খবর পাই— আমাদেরও অনেক লোক সেখানে বসবাস করে। প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে— আমরা ঠিক জানি না। এখানে আমি বলবো, একদিক থেকে বলতে গেলে এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার আছে সে অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি—একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া- এখান থেকে সরে আসাটাই বোধ হয় বাঞ্ছনীয়। সকলে সেটাই চাইবে আমি মনে করি।


বিজ্ঞাপন


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, তার ওপর সেঙ্কশন আমাদের যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি করছে। আশা করি, এই বিষয়টা উন্নত দেশগুলো একটু দেখবে। জলবায়ুর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো– আমরা যাতে বাঁচতে পারি, আমরা চাই সেটা সবাই দেখবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় আমি একটু না বললে নয়, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একে তো এই করোনা ভাইরাস, তার ওপরে যুদ্ধ— এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে— সেখানে আমাদের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের উপরে আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর তা সকলের উপলব্ধি করা উচিত।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো যদি আর একটু সক্রিয় হয়ে এই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে সেটা দেখবেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন তাদের নিজের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে, এভাবে ক্যাম্পের জীবনযাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সকলেই একটু সক্রিয় হবেন সেটাই আমি আশা করি। 

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো ছিল সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি বলে জানান সরকারপ্রধান।

রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক-কূটনীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল— আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে। সকলের সাথে মিলে আমরা কাজ করবো যাতে মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার দেশের মানুষের অর্থ-সামাজিক উন্নতি। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করতে চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য যতটুকু আছে আমরা সেইভাবেই চলতে চাই। আমরা অহেতুক কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নেই না। একটা কাজ করলে মানুষ কতটা লাভবান হবে, আমরা যেন কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারি, আত্মমর্যাদাশীল থাকতে পারি এবং আমরা যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য— এটা গুরুত্ব দিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।

/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর