সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, প্রতিদিন ওঠে দুই-আড়াই কোটি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, প্রতিদিন ওঠে দুই-আড়াই কোটি’

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি অবৈধ টাকা ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য ও অগ্রগতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের ওপর হাইকোর্টের রায় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা নতুন বেঞ্চে যাবেন অথবা প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হবেন।’

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি রায়ের বিরুদ্ধে যাচ্ছি না, রায়ের কথাও বলছি না। দুনিয়াতে যাদের যাদের ট্রিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে, এ পর্যন্ত তাদের বন্দরে সবচেয়ে বেশি ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে।’

পানগাঁও বন্দরে সরকার প্রতিবছর ২২ কোটি টাকা লস দিচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন আপনি লাভ পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হই যখন আপনারা এগুলো পেপারে দেন কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করেন নাই, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন কত অবৈধ টাকা ওঠে? আমি একটা রাফ ফিগার দিতে পারি; কিন্তু দিলে হয়ত ওটা নিয়ে কনটেস্ট হবে। মিনিমাম কত টাকা ওঠে? প্রত্যেকটি জায়গায় চাঁদাবাজি। ভেতরে ট্রাক দাঁড়ানো, দিনের পর দিন দাঁড়ানো, যেটা জায়গা না, কেউ না কেউ চাঁদা নিচ্ছে। ওখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে গেছে সেখানেও চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।’

অতীতে যিনি চট্টগ্রামের মেয়র হন তিনি মেয়র কম বন্দরের রক্ষক বেশি– এমন মন্তব্য করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরটা সোনার ডিম পাড়া মুরগির মতো। তাড়াতাড়ি এটা জবাই করো, সবগুলো বের করে খেয়ে ফেলো। প্রথমে বলল যে অমুক চলে গেলে বন্দর অনেক ডাউন হয়ে যাবে। আমি নিজে ভয় পেয়ে গেলাম। এখন কী করব। মিটিং করলাম, বললাম যে ঠিক আছে ৫ শতাংশ কম হোক সেটাও রাজি। এখন তো ফাস্ট, বন্দরে যেখানে দিনের পর দিন লাগত সেখানে একদিন, দেড় দিন এবং তারও কম সময় লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনি বিজনেসম্যানদের জিজ্ঞেস করেন না কেন? আমার সঙ্গে যত বিজনেসম্যানের দেখা হয় ১০০% বলছে স্যার যদি একটা ভালো কাজ করেন, তাহলে এই কাজটা করলেন। এটা তো আগের পরিকল্পনা, হঠাৎ করে আসেনি। অনেক কাজ হয়েছে; তবে হয়নি কেন, সেটা আপনারাই ভালো জানেন।’

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন আনুমানিক কত টাকা অবৈধভাবে আসে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। প্রত্যেকটা দিন। বন্দরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তারা বেশি বলবে।’

দুই-আড়াই কোটি টাকা আদায় বন্ধ করতে পেরেছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অনেক কমেছে।’

অনেকটা মানে পুরোটা বন্ধ করতে পেরেছেন কি না– জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন তুলে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে পুরোটা কমানো সম্ভব?’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের ওপর গত ৪ ডিসেম্বর বিভক্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই বিভক্ত রায় দেওয়া হয়।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রিট আবেদন (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন।

এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর