পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থাকে একইসঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কার্যকর প্রশমন উদ্যোগের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) পরিবেশ অধিদফতরে জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘যৌথ ঋণদান ব্যবস্থা (জেসিএম) প্রকল্প মিলন ও অগ্রগতি: ধারা ৬ এর বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন ‘কপ–৩০ এ বাংলাদেশের জাতীয় কার্বন বাজার কাঠামোর প্রাক-ঘোষণা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সুস্পষ্ট নীতি–দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে এবং প্রশমন প্রকল্প অনুমোদনের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আরও বিস্তৃত পরামর্শ গ্রহণ করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
হালনাগাদ এনডিসি অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬.৩৯% শর্তহীন এবং ১৩.৯২% শর্তাধীন নির্গমন হ্রাসের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা দ্রুত বাস্তবায়ন রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘শুধু এনডিসি দাখিল করাই যথেষ্ট নয়; এর সঙ্গে খাতভিত্তিক সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তা বাস্তবায়নে তৎপর হতে হবে।’
তার মতে, পর্যাপ্ত অভিযোজন অর্থায়ন পেলেও প্রশমনকে সমান্তরালে জোরদার না করলে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। দীর্ঘমেয়াদে টেকসই স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের পথ প্রশমনের ওপর নির্ভরশীল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রফতানিমুখী শিল্পখাত আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের পরিবেশ–মানদণ্ডের চাপে সবচেয়ে দ্রুত টেকসই উৎপাদনে রূপান্তর ঘটায়। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বৃক্ষরোপণভিত্তিক সিএসআর কার্যক্রম ছাড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা, টেকসই কৃষি ও প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানাই।’
বিজ্ঞাপন
একই সঙ্গে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে উন্নত প্রযুক্তি, তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ, কঠোর পরিবেশ মানদণ্ড, সঠিক স্থান নির্বাচন এবং তথ্য প্রকাশ— এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘনঘন জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ অনির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব অভিযোজন সক্ষমতাকে দুর্বল করে। জাপান আমাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত অংশীদার; জাপানের পরিচ্ছন্ন নগরায়ন, মানবিক নকশা ও জনবান্ধব উন্মুক্ত স্থানের উদাহরণ বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনায় অনুপ্রেরণা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও জাপান একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দুই দেশের পরিবেশগত সহযোগিতায় একটি দীর্ঘমেয়াদি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান (এনডিসি) প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত ও জাপানি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, জ্বালানি দক্ষতা এবং আর্টিকেল–৬ সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জেসিএম অফিসের পরিচালক কেইতারো তসুজি বেসরকারি খাতের জন্য অনুচ্ছেদ ৬ নির্দেশিকার উদ্বোধন করেন। আইজিইএস–এর কারিগরি সহায়তায় প্রণীত এই গাইডবুকের মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগযোগ্য প্রশমন প্রকল্প শনাক্ত, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যৎ কার্বন বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
এএইচ/এফএ

