রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‎সন্তানের খোঁজে প্রতিদিন রায়েরবাজার কবরস্থানে অপেক্ষা মায়ের

একে সালমান
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

‎সন্তানের খোঁজে প্রতিদিন রায়েরবাজার কবরস্থানে অপেক্ষা মায়ের

‎ছবি হাতে নিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত সন্তানকে খুঁজতে প্রতিদিন রায়েরবাজার কবরস্থানে আসেন রাশেদা বেগম। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেলের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে গেলেও প্রিয় সন্তানের খোঁজে ঘুমের ঘোরে কেঁদে ওঠেন। ২০২৪ এর ১৮ জুলাই সন্তান হারানোর দিন থেকে প্রিয় সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন এই মা।

‎‎রোববার (৭ ডিসেম্বর) জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অজ্ঞাতনামা শহীদদের মরদেহ শনাক্ত কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি।


বিজ্ঞাপন


‎‎নিহত শহীদ সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হওয়ার পর আমরা তাকে শনাক্ত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছি। কিন্তু তখন ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার প্রিয় সন্তানকে আমাকে না দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহ রেখে দেয়। আমরা অনেক আকুতি-মিনতি করেছি আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু তারা আমার ছেলের মরদেহ শনাক্তের পরও আমাকে দেয় নাই। হাসপাতাল থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর আর আমার সন্তানকে খুঁজে পাই নাই। এরপর শুনেছি তারা আমার ছেলেকে বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করেছে। প্রতিদিন আমার ছেলেকে খুঁজতে আসি। আমি আর তাকে খুঁজে পাই না। ডিএনএ করুক আর যাই করুক আমি আমার ছেলেকে খুঁজে মরদেহ নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরবো। আমি আমার সন্তানকে আমার বুকে আগলে রাখতে চাই।’

‎‎সোহেল রানার বাবা লাল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে ১৮ জুলাই শহীদ হয়। আমার ছেলের হাসপাতালে পড়ে থাকা একটি ভিডিও ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করি। এরপরই আমার ছেলের লাশের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু আমার ছেলেকে তারা আমাদের কাছে ফেরত দেয় না। অনেক আকুতি-মিনতি করার পরও তারা আমার ছেলের মরদেহ দেয়নি। আমরা মরদেহ চাইলে উল্টো আমাদের বলে, উপর থেকে আমার ছেলের মরদেহ দিতে নিষেধ আছে। এভাবে আমাদের ঘুরিয়ে বলে তারা বেওয়ারিশ লাশগুলো পরে ফেরত দিবে। এরপর আর ঢাকা মেডিকেলে আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। অনেক খোঁজাখুজি করেও আমার ছেলেকে পাইনি।’

‎‎নিখোঁজ শহীদের ভাই আলভিন নাভিল বলেন, ‘আমার ভাই গার্মেন্টস ব্যবসা করতো। ১৮ জুলাই আন্দোলনে নেমে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়। এরপর একজনের ফেইসবুকে ভিডিও দেখে আমার ভাইকে শনাক্ত করি। সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে মিটফোর্ড মেডিকেলে খুঁজতে যাই। সেখানে না পেয়ে এরপর ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে আমার ভাইকে খুঁজে পাই না। অনেক মরদেহ হাসপাতালের ভেতর। এতো মরদেহের ভেতর অনেক খুঁজাখুঁজি করে আমার ভাইকে খুঁজে বের করি। ওই সময় হাসপাতালে আমার ভাইকে খুঁজে পেলেও হাসপাতাল আমার ভাইকে আমাদের কাছে দেবে না। অনেক আকুতি-মিনতি করার পরও আমাদের না দিয়ে তারা আমার ভাইকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। এরপর আমরা আঞ্জুমানে গিয়েও কোনো তথ্য পাইনি। তারা বলে আমার ভাইকে বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‎‎আমার মা প্রতিদিন আমার ভাইয়ের ছবি নিয়ে রায়েরবাজার কবরস্থানে আসে। এসেই অজ্ঞাতনামা কবরস্থানের সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা এসে অনেক বুঝিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যাই। সে বাসায় গিয়েও সারারাত কাঁদতে থাকে। আমার ভাইকে হারিয়ে আমার বাবারও পাগলপ্রায় অবস্থা। মূলত আমার ভাইকে হারিয়ে পরিবারের সবাই পাগলপ্রায় অবস্থা। কেউ ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, খাওয়া দাওয়া করতে পারি না। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে। ঘুমের মধ্যে আমার মা কেঁদে ওঠে।’


বিজ্ঞাপন


আলভিন নাভিল বলেন, ‘‎‎আমরা ডিএনএ শনাক্তের মাধ্যমে আমার ভাইকে খুঁজে পেতে চাই। আজকে সিআইডি যে উদ্যোগ নিয়েছে; আমরা চাই তাদের মাধ্যমে অন্তত আমার ভাইয়ের মরদেহ খুঁজে পাব। ভাইয়ের মরদেহ খুঁজে পেলে আমরা অন্তত সান্ত্বনা পাব যে, আমার ভাইকে খুঁজে পেয়েছি।’

‎একেএস/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর