শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‎বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৯২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে এসেছিল: কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‎বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৯২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে এসেছিল: কমিশন
তদন্ত কমিশন জানিয়েছে ‎বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৯২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে এসেছিল।

‎বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৯২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল—তাদের মধ্যে অনেকের হিসাব মেলেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রচনায়, গোয়েন্দা তথ্য ও সাক্ষ্যে দেখা গেছে, বিদ্রোহের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশ ছিল ভারত। এজন্য সরকারকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা চাইতে সুপারিশও করেছে তদন্ত দল।

‎‎রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা শেষে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


‎‎সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল।  দেশকে অস্থিতিশীল করা, শেখ হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা, সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করতে এই বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছে।

‎‎আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে বিদ্রোহের সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজনের নাম তদন্তে উঠে এসেছে। তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম, মীর্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাহারা খাতুন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান জেনারেল আকবর।

‎‎তিনি আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তদন্তে ডাল-ভাত কর্মসূচি ও বিডিআর শপ তৈরি করা হয়েছিলো। যার কারণে ডিউটি অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। এছাড়া যেভাবে প্ররোচিত হয়ে থাকুক, তারা (বিডিআর সদস্য) সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বাহিনীতে চাচ্ছিলো না। বিডিআরের ভেতরে নানা ধরনের সংকট ছিল যা আমরা তদন্তে পেয়েছি।


বিজ্ঞাপন


‎‎এছাড়াও, বিডিআর বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে পাঁচ সেনা কর্মকর্তাকে গুম করা হয়েছিলো। এই বিষয়ে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে প্রতিবাদ করে ছয় সেনা সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিদ্রোহের সময় পিলখানার ৫ নাম্বার গেটে র‍্যাবের সদস্যরা মোতায়েন ছিলো। সেই সময়ে র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন কর্নেল রেজা নুর। পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চললেও তারা কোনো ভূমিকা রাখেনি। কারণ, র‍্যাব সদস্যদের

‎কর্ণেল রেজা নুর নিষেধ করেছিলো। যখন এই ধরনের বিদ্রোহ হয় তখন র‍্যাব, পুলিশের কোনো আদেশের প্রয়োজন হয় না। এই বিষয়টা আমরা সুপারিশ করেছি।

‎প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার নেপথ্যে আমরা ভারতকে বুঝিয়েছি। যেখানে শেখ হাসিনা তার দলবল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিদেশি সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সেখানে স্পষ্টভাবে ভারতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

‎‎তিনি আরও বলেন, অপারেশন ডাল ভাত নয়, বাংলাদেশলে অস্থিতিশীল করা ও বিডিআরকে দুর্বল করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এটাকে আড়াল করে অপারেশন ডাল ভাত ও আর্মি অফিসারদের বিষয়ে ক্ষোভকে সামনে আনা হয়েছে।

‎‎এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনা বাহিনীতে একটা নিয়ম আছে, যে একজন অফিসার ৩ বার বোর্ডে সুপারসেডেট হলে তার আর পদোন্নতি হয় না। এই বিদ্রোহের যারা সরকারকে সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে এই সুপারসেডেট কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি। এমন কি সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে সুপারসেডেট ছিলেন। তার চাকরি থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্রোহের পরে তাকে পদোন্নতি দিয়ে বিজিবি প্রধান ও পরবর্তীতে সেনা প্রধান করা হয়েছে। এভাবেই ওই সকল সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে ভালো ভালো জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে। দুর্বল জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে সরকার নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তারা এটা করেছে।

‎এ সময় তদন্ত কমিশন কমিটির দাবি করেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। বিদ্রোহ দমনে সেনা অভিযান হলে শহরের ৩ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে আর্মিকে রাখা হতো না।। 

‎‎এছাড়াও, কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে সেনা কর্মকর্তাদের ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র। ভুক্তভোগী সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে- কারো চোখ তুলে ফেলা হয়, কারো পা ভেঙে দেওয়া হয়, শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও বাসায় লুটপাট করা হয়।

‎‎একেএস/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর