শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেভাবে হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ট্রায়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

যেভাবে হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ট্রায়াল

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে ভোটের দিনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা পূর্বানুমান করতে দুই রঙের ব্যালটে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মক ভোটিংয়ের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকালের দিকে মক ভোটিং কার্যক্রমে হযবরল অবস্থা হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

সরেজমিন সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দেখা যায়, সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরুর পর প্রথমে ধীরে চলেও পরে তা বৃদ্ধি পায়। এরপর ভোট গ্রহণের একঘণ্টা পরে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ মক ভোটিং পরিদর্শনে এলে ভোটকেন্দ্রের বেহাল অবস্থা দেখে কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কত সময় লাগে ভোট দিতে তা পুনরায় নিজে তদারকি শুরু করেন। মক ভোটিং চলাকালে শেরেবাংলা নগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে উৎসুক জনতা ও ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার  মতো ছিল।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (২৯ নভেম্বর)  সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পযন্ত এই মক ভোটিং চলে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একসঙ্গে সংসদ ও গণভোট নিতে কত সময় লাগে এবং কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে ভোট ব্যবস্থাপনায় তা চিহ্নিত করা হবে।

পরিদর্শন করার সময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘ভোটের লাইনে দাঁড়ানো থেকে ভোট দেওয়া পর্যন্ত কত সময় লাগে তা দেখতে হবে। কারণ, এই সময়ের ওপর ভিত্তি করে আমাদের অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভোটকক্ষের সংখ্যা ঠিক আছে কিনা, গোপনকক্ষের সংখ্যা ঠিক আছে কিনা, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে কিনা ইত্যাদি। শুধুমাত্র এখানে নাটক করার জন্য এই কাজটা নয়, কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরকম হযবরল ও অরাজকতা থাকলে এ কাজ করে লাভ নেই।’

MV2

প্রিজাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভোট ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করা সম্ভব হয়েছে। ভোটার সিরিয়াল জানানো থেকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত সহায়তা করা হয়েছে। গোপনকক্ষে ভোট দেওয়ার আগে ভোটার তালিকা যাচাই, ব্যালট পেপার সরবরাহ, সিল, কালি দেওয়া সব মিলিয়ে প্রতি ভোটারের জন্য এক মিনিটের মতো সময় লাগে।’


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ‘এই মক ভোটিংয়ে ৫০০ ভোটারের মধ্যে ৭০.৪% ভোট পড়েছে; অর্থাৎ ৩৫২ জন ভোট দিয়েছেন। চার ভোট কক্ষে মক ভোটিং নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রতিটি ভোট দিতে কত সময় লেগেছে তা নির্ধারণ করা যাবে না।’ 

নির্বাচন কমিশনারের ভোট পরিদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার একটি বুথে নানা ধরনের ভোটারদের নিয়ে টাইম পর্যালোচনা করেছেন। এটা নিয়ে একটা প্রতিবেদন আসবে। এর ভিত্তিতে সামগ্রিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন।’

শহিদুল আলম নামের একজন ভোটার বলেন, ‘গণভোট নিয়ে প্রচারণা দরকার আছে। এখানে গোলাপি রঙের ব্যালটে কী লেখা আছে তা পড়ার সুযোগও হয়নি, ছোট লেখায় খেয়ালও করতে পারিনি। আমি এটা ভালোভাবে বুঝিনি। একটা টিক ও ক্রস চিহ্ন রয়েছে—একটাতে সিল মেরে দিলাম।’

আবু হানিফ নামে একজন ভোটার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ যখন এখানে ভোট দিতে এসেছি, তখনও আমাদের জানানো হয়নি গণভোটে কী কী থাকবে। আগে থেকে যদি ব্রিফ করতেন, তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম। আবার সব পড়ার সুযোগও ছিল না। তারপরও হ্যাঁ ভোট দিয়েছি।’

MV1

অন্য এক ভোটার হাজি মোহাম্মদ শফিকুল বলেন, ‘একই দিনে দুটি ভোট হলে একটু সমস্যা; আমি ভালোভাবে বুঝতে পারলে জেনে-বুঝে হ্যাঁ বা না ভোট দিতে পারতাম। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আরও ভূমিকা রাখতে পারতো। তবে, হ্যাঁ ভোট নাকি না ভোট দিয়েছি, তা জানাতে চাচ্ছি না।’

অন্য এক নারী ভোটার বলেন, ‘এখন তো ভোটের পরিবেশ ভালো। তবে আসল ভোটের দিন পরিবেশ কেমন থাকবে তা দেখার বিষয়। সংসদ ভোটের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট আলাদা হওয়ায় ভোট দিতে সহজ হয়েছে। তবে গণভোট সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানানো দরকার ছিল।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন মক ভোটিং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অনুমানের ভিত্তিতে এগোতে চাই না। বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। যদি মনে হয় বুথ বা পোলিং স্টেশন বাড়ানো প্রয়োজন, আমরা তা করব। খরচ নয়, ভোটারের সুবিধাই আগে।’

মক ভোটিংয়ে দীর্ঘ লাইন, সময় নিয়ে উদ্বেগ

মক ভোটিংয়ে অনেক ভোটার দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটি সময় সংকটের ইঙ্গিত দেয় কি না— এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘এটাই তো অ্যাসেসমেন্টের উদ্দেশ্য। একজন ভোটার ভোট দিতে কত সময় নিচ্ছেন, গণভোটের ব্যালটের কারণে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সময় কত— সব হিসাব আজকের অভিজ্ঞতা থেকেই বের হবে।’

MV3

গণভোটে যেসব প্রশ্ন থাকবে
 
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাযথভাবে আয়োজনের আগে, আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকায় একটি প্রতীকী ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটের কার্যক্রম চলেছে। নারী-পুরুষ মিলে ৫০০ জন ভোটার এদিন ভোট দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংসদ নির্বাচনের দিন এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই গণভোটে জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য ব্যালট পেপারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

গণভোটের ব্যালটে প্রশ্ন


নির্বাচনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ মক ভোটে যে ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়, তাতে নিম্নলিখিত মূল প্রশ্নের বিপরীতে ভোটারদের কাছে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট চাওয়া হয়—

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি আছে?: (হ্যাঁ/না)

(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার: নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।

(খ) দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষ: আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধন করিতে হইলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হইবে।

(গ) ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্য বাস্তবায়ন: সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হইয়াছে— সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকিবে।

(ঘ) অপরাপর সংস্কার: জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইসির মক ভোটিংয়ে সিনিয়র ভোটার, বস্তিবাসী, শিক্ষার্থী, তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রকল্পের ভোটাররা অংশ নিয়েছেন।


এমএইচএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর