রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিশৃঙ্খলা, ধোঁয়া আর আর্তনাদের মাঝেই দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ঢাকা-১৭ আসনের মনোনীত এমপি প্রার্থী ডা. এসএম খালিদুজ্জামানের পক্ষ থেকে ওষুধ, স্যালাইন থেকে শুরু করে কয়েক ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। লোকজনও সাড়া দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।
বৌ বাজার কুমিল্লা বস্তির মুখের রাস্তায় দেখা গেল খালিদুজ্জামানের পক্ষ থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্যাম্প সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলেছে। ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে সারিবদ্ধ হয়ে শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ ভিড় করছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তাৎক্ষণিক সহায়তাও তুলে দিতে দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা ক্যাম্পের মাধ্যমে ওষুধ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করছেন।
বিজ্ঞাপন
মেডিকেল ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য রবিন ঢাকা মেইলকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর সবচেয়ে বেশি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ছে ধোঁয়া ও তাপে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষদের। আহতদের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, গা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশি ওষুধ দিতে হচ্ছে নাপা ও প্যারাসিটামল। সকাল থেকে অনেক শিশুই জ্বর ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ক্যাম্পে আসে, বয়স্কদের মধ্যে মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার অভিযোগও বেশি।
স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, আগুনের ধোঁয়া কয়েকঘণ্টা ধরে এলাকায় ছড়িয়ে ছিল। এতে অনেকেই চোখে জ্বালা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তিতে ভুগছেন। তাই ওষুধের পাশাপাশি স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর এসে ধুলো–ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেক মানুষ এখনো আতঙ্কে আছেন, খাবার-ঘুমের অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তাই স্বাভাবিক রাখতে সাধারণ জ্বরের ওষুধ, ব্যথানাশক, সর্দি-কাশির ওষুধ—এসবই বেশি লাগছে। তারা যতটা সম্ভব সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
খানিক পরেই সেখানে আসেন ডা. খালিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এখানে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। তবে আমাদের জানামতে কারো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। অনেকেই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কারও শরীর পুড়ে গেছে, কারও মাথায় আঘাত। আমরা যা পারছি চিকিৎসা দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের পুরো টিম গতকাল মঙ্গলবার থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। আগুন নেভানো থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় খাবার দেওয়া ব্যবস্থা করেছি। চেষ্টা করা হচ্ছে তাদের পাশে থাকার।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি- তাদের যেন একটা পুনঃবাসনের ব্যবস্থা করা যায়। জাশায়াতে ইসলামী সব সময় মানুষের পাশে থাকে এবং দুর্দিনে তাদের পাশে থাকে এখনো তাদের পাশে থাকবে।
এ দুর্ঘটনায় দেড় হাজারেরও বেশি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মুহূর্তে সব হারিয়ে হাজারো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ ঘরের পোড়া বাঁশ একত্র করে ছাউনি বানাচ্ছেন, কেউ ছেঁড়া কাপড় টানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। চারদিকে অনিশ্চয়তা, ক্ষুধা আর শীতের চাপ—সব মিলিয়ে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এর আগে গত রাতে বিপর্যয়ের মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে কড়াইল বস্তিতে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি এলাকা ঘুরে দেখেন এবং অসহায় মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এ সময় কাউকে একা ফেলে রাখা যাবে না। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকেও মানবিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিডিয়ার আলোচনার মাধ্যমেই ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আরও বিস্তৃত সহমর্মিতা তৈরি হবে। এই মানুষগুলোর দুর্দশা জাতীয়ভাবে তোলা জরুরি।
এএইচ/এমআইকে/ক.ম

