শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাস্তার ঝামেলা এড়াতে আগেই ঢাকা ছাড়ছেন বাইকাররা

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ০৬:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রাস্তার ঝামেলা এড়াতে আগেই ঢাকা ছাড়ছেন বাইকাররা

শফিউল আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাড়ি বগুড়ায়। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সকাল ৯টায় কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাঁটাবন মার্কেটের সামনে। সঙ্গে আরও ছয় বন্ধু মিলে সকালের নাস্তা করছিলেন একটি হোটেলে। শফিউলের মতো অন্য পাঁচজনও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়শোনা করছেন। তিনটি মোটরসাইকেলে বিভিন্ন ব্যাগ বাঁধা রয়েছে। সেই সঙ্গে সবার কাঁধের ব্যাগও রয়েছে। পরিচয় হওয়ার পর কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ঈদযাত্রা ভাই। আরও দুদিন পরে যেতাম। সরকারে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে আগেই যাচ্ছি। একটি কোচিং করতাম, আরও দুদিন ক্লাস হবে, কিন্তু তখন আবার বাইকে যেতে নানা সমস্যা যদি হয়।

একই সময়ে আরও একটি টিম আসে কাঁটাবনের ওই রেস্তোরাঁয়। তারাও শফিউলের পূর্বপরিচিত। তারা যাচ্ছেন কেউ পিরোজপুর, কেউ মাদারীপুর, কেউ বরিশালের পথে। সকালের নাস্তা শেষে সবাই কোলাকুলি-হ্যান্ডশেক করে গন্তব্যে যাত্রা করেন। দুপুরে মোবাইলে কথা হয়, ততক্ষণে শফিউল টাঙ্গাইল পার হয়ে যমুনা সেতুতে পৌঁছেছেন। দুপুরের যাত্রাবিরতি দেবেন সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি। আরেক টিমের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ফেরি পার হয়েছেন। ফেরিঘাটে একটু সময় লেগেছে উল্লেখ করে ওই টিমের সজীব বলেন, এমনিতে কোনো সমস্যা নেই।


বিজ্ঞাপন


গত রোববার (৩ জুলাই) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায়  ঈদের আগে তিন দিন পরে তিন দিন এবং ঈদের দিনসহ মোট সাত দিন মহাসড়কে মোটর বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। সেই সঙ্গে এক জেলায় নিবন্ধিত মোটরবাইক অন্য জেলায় চালানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে  সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা শেখ ওয়ালি ফয়েজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও সভার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরে তিন দিন এই সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল করবে না। একই সময়ে দেশের সব মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং করা যাবে না। কোনো জরুরি কারণে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে হলে তা পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশের অনুমতিসাপেক্ষে এক জেলার মোটরসাইকেল অন্য জেলায় যেতে পারবে। সচিব জানান, এই সিদ্ধান্তের বাইরে ঢাকার মোটরসাইকেল ঢাকায় চালাতে হবে। চট্টগ্রামের মোটরসাইকেল চট্টগ্রামে এবং বরিশালের মোটরসাইকেল বরিশালে চালাতে হবে।

motor1


বিজ্ঞাপন


এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভোগান্তি এড়াতে মোটরবাইকাররা আগেভাগেই বাড়ির পথ ধরছেন। কেউ কেউ কর্মস্থলে ছুটি নিয়েছেন আর যারা শিক্ষার্থী তারাও সড়কে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে বাড়ির পথ ধরছেন। আগামী ১০ জুলাই ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে, সে হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে আগামী বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে। তাই সেই নিয়মের বেড়াজালের আগেই অনেক বাইকার এখন বাড়িমুখী।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই পথ ধরে অসংখ্য মোটরবাইক যাচ্ছে, যাদের কারও কারও বাইকে বিভিন্ন ব্যাগ বাঁধা রয়েছে। গাড়িতে বা কাঁধে ব্যাগ রয়েছে এমন কয়েকজন মোটরবাইকার, যারা পেট্রোলপাম্পে তেল নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছেন এরকম একাধিক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশিরভাগই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন সুমন ও তার ভাই যাচ্ছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি। যেতে তিন ঘণ্টার একটু বেশি সময় লাগতে পারে জানিয়ে সুমন বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তবে আগাম ছুটি নিয়েছেন। ছোট ভাই একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন, সেখানে দুদিন না গেলে সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।

সুমন আরও বলেন, ‘নিজের টাকায় গাড়ি কিনছি, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে, কাগজপত্র ঠিক আছে, তবুও নাকি চলতে দেবে না। আমি অনেক সময় ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়েও টিকিট পাইনি। করোনার সময় থেকে বাইকে বাড়ি যাই, তেল খরচ যায় ৫০০ টাকার মতো।

গাবতলী ও কল্যাণপুর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিকের একাধিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটা নির্দেশনা আছে, তবে সেটিতো এখনই নয়। নিময় অনুসারে এখন যারা যাচ্ছে তারা সঠিক। আমরা বৃহস্পতিবার থেকে মোটরসাইকেল আটকাবো।

rr

রাজধানীর বনানীতে শেরপুরের উদ্দেশে যাত্রা করা গালিব হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই শহরে এখন আমার কাজ নেই বললেই চলে। তবে কোচিং খোলা ছিল, যা শেষ ক্লাস হবে বৃহস্পতিবার। শেষের ক্লাসটি মিস করলাম, কারণ রাস্তায় ঝামেলা হতে পারে। আর আমার চাচাতো ভাই চাকরি করেন, উনি গাড়িতে বাড়ি আসবেন শুক্রবার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আগামীকাল বুধবার বাড়ি যেতে চান বন্ধুরা মিলে। সে মোতাবেক ইতোমধ্যেই কেনাকাট বা টুকিটাকি প্রস্তুতি শেষ করেছেন। ভোরেই বাড়ির পথে যাত্রা করবেন। তাদের একজন সৈকতের বাড়ি জামালপুর। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার সাথে ময়মনসিংহের চারজন আর আমরা জামালপুরের দুজন, শেরপুরের চারজন আছি। একসাথে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাবো, পরে আলাদা সড়কে চলে যাবো।

সৈকত বলেন, ‘এরকম সিদ্ধান্তকে অন্যায় মনে করি। আপনি দেখেন, এটি আমার ব্যক্তিগত বাহন অথচ প্রাইভেটকার, জিপ গাড়ি কিন্তু বন্ধ করেনি। এটি বাস মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া কিছুই নয়। এভাবে কি বাইক নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

nn

ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা ডিএমপির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো। আর মোটরসাইকেলের নির্দেশনা কথা জেনেছি, সেটি অর্ডার যা থাকবে ফলো করবো।’

উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-মিরপুর) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান স্যার দেখছেন, তিনিই নির্দেশনা দিচ্ছেন।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ও পরে মোট সাত দিন জেলা থেকে জেলায় মোটরসাইকেল চলবে না। আমরা বের হওয়া পয়েন্টগুলোতো খুব শক্তভাবে এটি প্রতিপালন করবো। ঢাকার যে নাম্বারগুলো আছে সেগুলো সাভার আশুলিয়া পর্যন্ত চলবে আবার এদিকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত চলতে পারবে। এরপর অন্য জেলা মুখেই আমাদের টিম থাকবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাড় দেওয়া যেতে পারে, যেমন কেউ মুমূর্ষু রোগী নিয়ে আসছেন বা জরুরি হাসপাতালে যেতে হবে। এর বাইরে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

bba

ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রবেশপথ রয়েছে আব্দুল্লাপুর, গাবতলীর আমিনবাজার। এছাড়া যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভার এবং কেরানীগঞ্জ হয়েও বের হওয়া যায়। এর বাইরেও অসংখ্য রাস্তা রয়েছে যেখানে গাড়ি না যেতে পারলেও বাইক দিয়ে যাতায়াত করা যায়। সেসব জায়গায় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এ বিষয়ে ডিএমপির দায়িত্বশীল কারও মতামত পাওয়া যায়নি।

কল্যাণপুর এলাকায় এক ট্রাফিক কর্মকর্তা পরিচয় গোপনের শর্তে বলেন, 'ভাই খোলামেলা যদি বলি, উপরের নির্দেশনা শতভাগ চেষ্টা করবো পালন করতে। রোস্টার ডিউটি হয় তিন শিফটে। তবে বিষয়টি কতটুকু পালন করা যাবে বুঝতে পারছি না এখনই। এটিতো ছোট বাহন আমরা মহাসড়কে কড়াকড়ি আরোপ করলেও রাস্তারতো শেষ নেই। এটি যদি বড় গাড়ি হতো তাহলে সেগুলো সব সড়কে প্রবেশ করে না বা করানো যায় না। দেখা যাক কী হয়, স্যাররা কী নির্দেশনা দেন।'

ডব্লিউএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর