ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) নিকৃষ্ট যন্ত্র আখ্যা দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে এটি ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা দেখছে না সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইভিএম নিকৃষ্ট যন্ত্র। ভোট দেওয়ার পরে ইসি যে তথ্য দেবে সেটাই মেনে নিতে হবে। এই কারণে এ ইভিএম গ্রহণযোগ্য না। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখেছি অনেকে ভোট না দিতে পেরে চলে গেছে। যে যন্ত্র মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সেই যন্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী?’
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। বদিউল আলম বলেন, ইসি ইভিএমের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করেছে। এটা কাঙ্খিত নয়।
কুসিক নির্বাচনে ইভিএম কাঠগড়ায় ছিলো এমন মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আগের মডেলের ইভিএমে ২০১২ সালে কুমিল্লায় ৭৫ শতাংশ ভোটের হার ছিল। ব্যালেট পেপারে অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালের নির্বাচনে ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর ইভিএমে হয়েছে ৫৯ শতাংশ। এতে প্রমাণ হচ্ছে ভোট কমেছে। গণমাধ্যমে দেখেছি অনেকেই ভোট না দিতে পেরে বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ইভিএম মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
বদিউল আলম বলেন, যে যন্ত্র মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেটা ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। বলা হয় ইভিএমে সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল আসার কথা, কিন্তু চারটি কেন্দ্রে চার ঘণ্টা পরে কেন ফলাফল এলো? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। নাটকীয়তা হয়েছে তার অবসান হওয়া দরকার। এজন্য ইসির একটা তদন্ত কমিশন করার দরকার।
বিজ্ঞাপন
সুজন সম্পাদক বলেন, ইভিএমে নির্বাচন কর্মকর্তার আঙ্গুলের চাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এতে তো ফলাফল পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা ডাকাতি করতে পারে। তবে, আমি তাদের ডাকাত বলছি না।
বদিউল আলম বলেন, ইভিএম একটা নিকৃষ্ট যন্ত্র। কারণ এখানে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই। প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ইসির কারগরি কমিটির প্রধান ছিলেন কিন্তু এই সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি। অনেক দেশেই ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে বলেও জানান তিনি।
সুজন সম্পাদক বলেন, কুসিক নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেগুলোর সুরাহা হওয়া দরকার। আমরা দাবি করছি একটা তদন্ত কমিটি করার জন্য।
কুমিল্লার ভোটের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহারের বিরুদ্ধে ইসি আইন অনুযায়ী যে শপথ নিয়েছে তা প্রয়োগ করতে পারেনি বলে দাবি করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, যদিও সংসদ সদস্য এ আইনের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু আইনতো বাতিল হয়নি। তারা বলেছেন কৌশলে তিনি (বাহার) প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার পরেওতো তারা অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করেছেন। সময়ক্ষেপণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের কয়েকটা দল ছাড়া সবাই ইভিএমের বিপক্ষে। তাদের আস্থা ফিরিয়ে ও নির্বাচনে আনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা নেই।
ইসির প্রথম পরীক্ষায় অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, যে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর ভোট যদি প্রিন্ট নেওয়া যেতো, যেটা ভারতে রয়েছে। ওখানে কেউ অভিযোগ করলে ইভিএমের প্রতিটি ভোট প্রিন্ট আউট করে পুনর্গণনা করার সুযোগ রয়েছে। এটা বড় বিতর্ক। দশ আঙ্গুলের চাপ বা চোখের আইরিশ ব্যবহার করার চিন্তা ইসি করতে পারে।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিষয়ে ইসি ফেল করেছেও বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
‘রাঘববোয়ালের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ইসি’
নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কুমিল্লায় দেখা গিয়েছে ইসি আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করেনি। আচরণবিধির ৩১ ও ৩২ ধারায় যে বিধান রয়েছে সেটা সংসদ সদস্যের (আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) ব্যাপারে প্রয়োগ করেনি। কিন্তু তারা চুনোপুটির ব্যাপারে অনেকক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করেছে, অনেক কিছুই করেছে। রাঘববোয়ালের ক্ষেত্রে নতজানু হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করেছে। ইসি যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নাগরিকরা যাবে কোথায়?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা অসংলগ্ন ও স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেন সুজন সম্পাদক।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা সংসদ সদস্যকে নোটিশ দিয়েছেন কিনা, নির্দেশ দিয়েছেন কিনা, কিংবা দেয় নাই, তারাও ব্যর্থ হয়েছে কিনা এরকম অনেকগুলো কথা বলেছেন। বস্তুত এর মাধ্যমে ইসি শপথ ভঙ্গ করেছে বলে আমার আশঙ্কা। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির শপথ নিতে হয়। আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত কর্তব্য পালনের শপথ গ্রহণ করেন তারা। কিন্তু এখানে সেটা করেছেন কিনা সেটা আমাদের বড় প্রশ্ন। আশা করি এটা তারা বিবেচনায় নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হলফনামা যাচাই বাচাই করার অনুরোধ করে সুজন সম্পাদক। বলেন, এতে নতুন সংস্কৃতি চালু হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিরা নির্বাচন থেকে বিতাড়িত হবেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত হবে।
বিইউ/এমআর

