ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ বাড়ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের মধ্যে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পর মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সম্ভাব্য হামলা, ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক চাপের আশঙ্কায় অনেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আতঙ্কে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
ইসি সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। মাঠপর্যায়ে জনবল কম, তার ওপর রাজনৈতিক চাপ ও ‘মব কালচার’-এর কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, নির্বাচনের সময় হামলা ও নাশকতার ঘটনা আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি কমিশনকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে মারধর করা হয়। ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আমজাদ হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইসি সচিবালয়সহ সকল পর্যায়ের ইসি কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন।
গত ২৫ অক্টোবর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় এলাকাটি বিশেষ নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অফিস সময়ের বাইরে নির্বাচন ভবনের আশপাশে রাত পর্যন্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান থাকায় সেখানে নাশকতার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মনে করছে ইসি। এ কারণে এসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধসহ নিরাপত্তা টহল জোরদার করা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে অনেক প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, সমন্বয় এবং আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা দূর করা সম্ভব হবে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কত সংখ্যক নিয়োগ হলো তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা পেশাদারত্ব ও আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না। অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সমন্বয়ের বিকল্প নেই।’
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে না। নির্বাচনী কাজে সফলতার জন্য সমন্বয়ের বিকল্প নেই। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, এই জন্য তার নিরাপত্তা ও তাকে সহযোগিতা প্রদান করা খুবই জরুরি।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। নির্বাচন পূর্ব সময়ে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে যেমন: প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পরাজিত প্রার্থী কর্তৃক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, বিগত দিনের নির্বাচনের কালচারাল পরিবর্তন বা খারাপ অভ্যাসগুলো সংস্কৃতির রূপ ধারণ করায় নির্বাচনী অনিয়মের চেষ্টা করা, নির্বাচনী ইনটিগ্রিটি নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা। এ সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরে সমন্বয় প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতেই অপরাধ দমন করা গেলে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু হবে। এ ছাড়া, নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু ও জংঙ্গীকার্ড ইস্যুর মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। মানুষের ভয়েস ক্লোন করে বা চরিত্র হননের ঘটনা ঘটতে পারে, এটি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ করতে হবে। বাহিনী প্রধানদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং থাকতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার, তফসিল ঘোষণার পর থেকে চেকপয়েন্ট বসিয়ে রেন্ডম চেক করা, প্রয়োজনে বর্ডার ও সি-রুট সিল করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্যাবোটাজের ঘটনা ঘটতে পারে, এর প্রতিরোধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।’
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নভেম্বরে সকল প্রস্তুতি শেষ করে তফসিল ঘোষণার অপেক্ষা করবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
এমএইচএইচ/এমআর

