শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রিকশা চালক থেকে ডাকাত দলের সর্দার! 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রিকশা চালক থেকে ডাকাত দলের সর্দার! 
সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৯ সদস্য। ইনসেটে ডাকাত সর্দার। ছবি: ঢাকা মেইল

শহিদুল ইসলাম একসময় রিকশা চালাতেন। পরে অর্থের লোভে পড়ে জড়িয়ে পড়েন ডাকাতিতে। ছয় থেকে নয়জনকে নিয়ে গঠন করেন একটি ডাকাত দল। দুই থেকে তিন মাস পরপর রংপুর ও গাজীপুর মহাসড়কে ডাকাতি করতেন তারা। মহাসড়কে গভীর রাতে গাছ ফেলে চালকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনিয়ে নিতেন সর্বস্ব।

শহিদুলের ডাকাতের দলে পরামর্শদাতা, ডাকাতি করে পালানোর সহযোগিতাকারী ও ডাকাতির মাল কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সেই ব্যক্তিও ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে চক্রটি এভাবে রংপুর ও গাজীপুর মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। রোববার (৩ জুলাই) রাতে অভিযান চালিয়ে মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চক্রটির নয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের নামে থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তারা আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে বড় আকারে ডাকাতির জন্য গাজীপুরের গাছা উপজেলার ঝাঁজর এলাকায় একত্রিত হচ্ছিল।


বিজ্ঞাপন


গ্রেফতার ডাকাত দলের নয় সদস্য হলেন শহীদুল ইসলাম (৩৪), আয়নাল মিয়া ওরফে আয়নাল হক ওরফে আয়নাল (৩৯), আন্ডু মিয়া (৫৭), ইসলাম ওরফে আইনুল (৩২), উজ্জল চন্দ্র মহন্ত (২৭), শাহিন ওরফে সজিব (৩৩), শহিদ (৩৮), রনি সরকার (২৪) ও আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু ওরফে আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুটি ওয়ান শুটার গানের গুলি, দুটি ছোড়া, একটি রামদা, একটি দা, পাঁচটি গামছা, একটি রশি, একটি করাত, দুটি টর্চ লাইট, একটি বস্তা, ১১টি মোবাইলফোন এবং নগদ দেড় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 

dakat2

সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল আল মোমেন বিস্তারিত তুলে ধরেন।


বিজ্ঞাপন


র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার শহিদুল ইসলাম এই ডাকাত চক্রের মূল হোতা। তিনি একসময় রিকশা চালাতেন। পরে ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্নজনকে নিয়ে ডাকাত দল গঠন করে রংপুর ও গাজীপুর মহাসড়কে ডাকাতি চালাতেন। শহিদুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।

ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের পরিচয় তুলে ধরে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আয়নাল মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং ডাকাতি সংঘটনের জন্য তিনি গাজীপুরের গাছা উপজেলার ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিলেন। তিনি পাঁচ বছর ধরে চুরি এবং ডাকাতির চক্রের সাথে জড়িত। তিনি আগে পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। প্রথমে সহজলভ্য এবং অধিক অর্থের আশায় তার নিজ এলাকায় ছোট ছোট চুরির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরে একই এলাকার এই ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলামের সাথে পরিচয়ের পর তার সাথে ডাকাতি চক্রে জড়িয়ে পড়েন। আইনাল মিয়ার মূল দায়িত্ব ছিল জায়গা নির্ধারণ এবং অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের সংঘবদ্ধ করা। এছাড়া ডাকাতির স্থান এবং ক্ষণ নির্ধারিত হলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের নিজ এলাকা থেকে নিয়ে এসে তার আবাসস্থলে অবস্থান করান। সাধারণত ডাকাতির পর লুণ্ঠিত মালামাল তিনি ডাকাত সর্দারের নির্দেশে অন্যান্য সদস্যদের মাঝে বণ্টন করতেন। এছাড়াও তিনি ছোট ছোট মাদক চোরাচালানের সাথেও জড়িত ছিলেন। আইনালের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে। 

dakat3

গ্রেফতার আন্ডু মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং পরামর্শদাতা। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে চুরি এবং ডাকাতির চক্রের সাথে জড়িত। এর আগে তিনি পেশায় একজন চা দোকানি ছিলেন। আগে তিনি অন্য এক ডাকাত দলের সর্দার খোকন মিয়ার সাথে ডাকাতি করলেও পরে খোকন মিয়া ২০১৮ সালে ডাকাতির মামলায় জেলে গেলে তিনি শহিদুলের ডাকাত দলের সাথে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির পেশায় জড়িত থাকায় তিনি সাধারণত এই ডাকাত চক্রের পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার শহিদ এই ডাকাত চক্রের সাথে গত তিন বছর ধরে জড়িত। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসেবে পরিচিত। এই ডাকাত চক্রে তিনি ডাকাতির পর পলায়ন পরিকল্পনাকারী এবং পলায়নে সহায়তার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং চুরিসহ ১২টি মামলা রয়েছে। 

এছাড়াও ডাকাত চক্রের সদস্য শাহিনের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ দুটি, উজ্জলের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ দুটি, আজিজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি, আব্দুল হাকিম এবং রনি সরকারের বিরুদ্ধে চুরির একটি করে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এমআইকে/জেবি

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর