সেনা কল্যাণ সংস্থার সুবর্ণজয়ন্তী ও ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রোববার (৩ জুলাই) ঢাকার মহাখালীর সেনা কল্যাণ সংস্থায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি সেনা কল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে (এসকেএস টাওয়ার) পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন।
এ সময় সেনাপ্রধান এসকেএস টাওয়ারের ১০তম তলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন। এছাড়া, সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, সেনা কল্যাণ সংস্থায় কর্তব্যকালীন অবস্থায় আহত/নিহত সদস্যদের পরিবারবর্গের মাঝে উপহার সামগ্রী প্রদান ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদানসহ সেনা কল্যাণ সংস্থায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
১ জুলাই ১৯৭২ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালের ‘ফৌজি ফাউন্ডেশন’ আপামর জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণের ব্রত নিয়ে সেনা কল্যাণ সংস্থা নামে পূণর্জন্ম লাভ করে। সেনাবাহিনী প্রধান ও চেয়ারম্যান বোর্ড অব ট্রাস্টির বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনায় এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। কল্যাণমুখী এই প্রতিষ্ঠান বিগত বছরগুলোতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রায় ২০ লাখ অবসরপ্রাপ্ত সদস্যের মাঝে ৪৫৬ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে ১৫০০ কোটি টাকার অধিক কর প্রদানের মাধ্যমে জাতি গঠনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।
এই সংস্থা ঢাকা সিএমএইচ এ ক্যানসার ইউনিট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বোর্ডের তত্ত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি মেডিকেল ডিসপেনসারি এবং ঢাকাস্থ ডিওএইচএস এ চারটি জরুরি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র এই সংস্থার অর্থায়নে পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে এই সংস্থা কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। দেশব্যাপী করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা কল্যাণ সংস্থা খাবার ও বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দেশের অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে মানবতার কল্যাণে দুঃস্থদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

বেনিন দুর্ঘটনা এবং ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে পিলখানায় শহীদ সেনা অফিসারদের পরিবারের কল্যাণার্থে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মোতাবেক এই সংস্থা মিরপুর ডিওএইচএস এ ১৪ তলা বিশিষ্ট অপরাজিতা বিল্ডিং নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর নির্ধারিত সময়সীমার ১৪ মাস পূর্বে প্রাক্কলিত ব্যয় হতে নয় কোটি টাকা সাশ্রয় করে যাবতীয় নির্মাণ কাজ সমাপনান্তে গত ০৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ করে ৭৮ জন শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে সফলভাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থা সেনা পরিমণ্ডলে সেবার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিজ্ঞাপন
সেনা কল্যাণ সংস্থা সিমেন্ট, নির্মিত ফ্ল্যাট, রেডিমিক্স কনক্রিট, এলপিজি, ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, সুজি, পানি ও বিভিন্ন ধরনের গুঁড়া মশলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় রেখে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের মাধ্যমে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। সেনা কল্যাণ সংস্থার অঙ্গ সংস্থা সেনা কল্যাণ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তি হওয়াসহ নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেনা কল্যাণ সংস্থা কর্তৃক কনস্ট্রাকশন ও ডিমাইনিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে তথা কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, মালয়েশিয়া ও জাতিসংঘ মিশনে বিভিন্ন ব্যবসা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এসব মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী দিনে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান বহুগুণ বাড়িয়ে এবং আর্তমানবতার কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ সার্বিক কল্যাণের মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বলিষ্ঠ অবদান রাখবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
জেবি

