রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজট, রাজধানীর সড়কে আটকা হাজারো যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

Rain
বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজট, রাজধানীর সড়কে আটকা হাজারো যাত্রী

হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পুরো রাজধানীর চিত্র পাল্টে যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় বিরতিহীন বৃষ্টিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। বিশেষ করে অফিস থেকে ফিরে আসা মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে যাওয়া রোগীরাও। প্রয়োজনীয় কাজে বাসার বাইরে বের হওয়া মানুষদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় রাস্তায়।  

বৃষ্টির পানি, খোঁড়াখুঁড়ি করা রাস্তা, সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং বিকল্প রাস্তা না থাকার কারণে যানজট এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে কিছু এলাকায় গাড়ি একেবারেই স্থির হয়ে যায়। বিশেষ করে বিজয় সরণি, মহাখালী, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, আগারগাঁও, তেজগাঁও, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকার রাস্তাগুলোতে প্রায় একই ছবি দেখা যায়—লম্বা লাইন, হর্নের শব্দ, যাত্রীদের ক্লান্তি আর পরিবহন সংকট। 


বিজ্ঞাপন


IMG_20251101_202836
বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজট, রাজধানীর সড়কে আটকা হাজারো যাত্রী

 

মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেটগামী বিআরটিসির একটি বাসে ভিড়ের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা চাকরিজীবী আফজাল করিম বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসগুলোর গতি অর্ধেকে নেমে যায়, আবার কিছু জায়গায় পানি জমে থাকায় গাড়িগুলোকে সারি ধরে সামনে এগোতে হচ্ছে। 

আফজাল বলেন, সাধারণ দিনেও এই পথে জ্যাম থাকে। কিন্তু আজ তো বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজট, আটকে পড়লেন হাজারো যাত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৃষ্টিটা মাঝারি ছিল, কিন্তু রাস্তাগুলো পানিতে ভিজে চূড়ান্ত এলোমেলো হয়ে গেছে। দুই ঘণ্টা ধরে বাসে দাঁড়িয়ে আছি, অফিসে কখন পৌঁছাবো জানি না।  


বিজ্ঞাপন


IMG_20251101_203114
বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজট, রাজধানীর সড়কে আটকা হাজারো যাত্রী

 

এমন পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে অন্য যানবাহন ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও ভাড়া নিয়ে নতুন ভোগান্তি। রিকশা চালকেরা স্বাভাবিক ভাড়ার পাঁচ গুণ পর্যন্ত দাবি করছেন। আবার সিএনজির অটোরিকশা চালকেরা মিটার ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গন্তব্যভেদে কথামতো ভাড়া চাপিয়ে দিচ্ছেন। মিরপুর-১০ মোড়ে রিকশাচালক হাসান মিয়া বললেন, বৃষ্টি হলো, গাড়ি কম, সবাই রিকশা চায়। আজ ভাড়া কম নিলে লোকসান হবে। সকাল থেকে পানি আর ভেজা রাস্তায় চালানোই কষ্ট।

ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টি ও যানজটে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকা কলেজছাত্রী রাইসা হক বলেন, সাধারণ দিনে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে লাগে ২০ মিনিট। কিন্তু বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়েও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। বাস পাই না, রিকশায় উঠতে চাইলে ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা চাইছে। একজন ছাত্রীর পক্ষে এটা দেওয়া সম্ভব না। তাই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। 

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সড়কে একসঙ্গে তিন ধরনের সংকটে তারা পড়েছেন—বৃষ্টির কারণে গাড়ির গতি কমে যাওয়া, কিছু সড়কে চলমান খোঁড়াখুঁড়ি এবং গন্তব্যে যেতে সবার চাপ। যতই চেষ্টা করি, সংকেত ঠিক রাখি, কিন্তু বিকল্প রাস্তা না থাকায় গাড়িগুলো একই সড়কে চাপ সৃষ্টি করে। একটি গাড়ি নষ্ট হলে পুরো লাইন আটকে যায়। 

এদিকে হাসপাতালমুখী কয়েকজন রোগীর স্বজনরাও এক ধরনের আতঙ্কে পড়েছেন। শ্যামলী এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হওয়া নাসরিন বেগম নামে এক নারী জানান, তার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাফিক এমন ছিল যে পাঁচ কিলোমিটারের পথ অতিক্রম করতে তাদের লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। তিনি বলেন, কেউ যদি জরুরি রোগী নিয়ে আসতে চায়, আজ তার বিপদ ছাড়া আর কিছু হবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে বুকের ভিতর কেমন চাপ লাগে বোঝানো যায় না। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একটি দল মিরপুর ১০ এলাকায় বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা প্লাস্টিক ও নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নামতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তারা জানান, বৃষ্টির পানি নামার গতিও এখন আগের চেয়ে কম, কারণ বিভিন্ন সড়কে ড্রেনেজ লাইনে বর্জ্য আটকানো থাকে। এসব সমস্যা সমাধান না হলে অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকার রাস্তাগুলো অচল হয়ে যায়।

এএইচ/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর