ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে ফাঁসানো হয় এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীকে। এরপর দেওয়া হয় একে একে আরও ৪১টি মামলা। শুধু এখানেই শেষ নয়, তার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে চালানো হয় লুটপাট। তার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার ১৩৮টি যানবাহন জবরদখল করা হয়।
এই লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার বড় ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান খান লিটন। চক্রটি তাকে হয়রানি করতে বারবার ডিবির মাধ্যমে তুলে নিয়ে দিতো মিথ্যা মামলা। যার সঙ্গে তৎকালীন একাধিক ডিবি কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
এরশাদ আলীর দাবি, তিনি রাজশাহীর বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ছিলেন। এই থাকাই তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তাকে মিথ্যা মামলায় চার বছর জেলে বন্দি করে রাখে হাসিনা সরকারের প্রশাসন।
এরশাদ বলেন, ২০১০ সালের পর রাজনৈতিক বিরোধের জেরে আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি করা হয়। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা এখন ৪২টি। ২০১০ সাল থেকে একে একে এরশাদ গ্রুপের কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে প্রধান কার্যালয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি দখল করে। ধানমন্ডির বাসভবন তাদের ক্যাডার গোল্ডেন খোকনকে দিয়ে দখল করায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম দখল করে নেয়।
এছাড়া সোনারগাঁয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস ও ডেমরার স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখলে নেয়। এই আজিজের নেতৃত্বে আমার দুই কারখানার আড়াইশো কোটি টাকার মেশিনসহ মালামাল লুট করা হয়। এমন কি আমার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার ১৩৭টি ট্রাক এখনো তাদের দখলে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ২০ বিঘা জমির মাটি লুট করে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে অনেকবার ডিবি অফিসে নিয়ে গেছে। টাকার কারণে আমি বেঁচে ফিরেছি। ২০১৭ সালে তিন বার আমাকে তুলে নেওয়া হয়। প্রতি বার ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। সেই সময়ে ডিবির ডিসি আব্দুল বাতেন ও এডিসি লাকী আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন। টাকা পেলে তারা ছেড়ে দিত। টাকা না দিতে পারলে আমার লাশটাও হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত না। এভাবেই আমার ব্যবসা, টাকা পয়সা সব শেষ। এখন শুধু আমার মেধা ও মার্কেটে শুনাম ছাড়া কিছুই নেই। আমি পুলিশ কর্মকর্তাসহ সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এরশাদ আলী বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার চাই। যারা আমার প্রতিষ্ঠানের লুটপাট ও দখলের সঙ্গে জড়িত—তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
এরশাদ জানান, তিনি ১৯৯২ সালে তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ব্যবসার হাল ধরেন। দেশের শীর্ষ ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠান শাহ মখদুম ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা থেকে শুরু করেন। দুই শতাধিক ছোট বড় ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন করতেন তিনি। এভাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন। এই গ্রুপের ১০/১২টি প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। কিন্তু সব কিছু দখল করে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে, শামীম ওসমান, রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শামীম ওসমানের সহযোগী আজিজুর রহমান আজিজকে দর্শনা সীমান্ত থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে মিন্টো রোড ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। চাঁদাবাজির মামলায় আজিজকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত পাঠানো হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। আজিজের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় এখনো তার ২৫ থেকে ৩০টি ক্যাডার বাহিনী সক্রিয়— বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এরশাদ আলী। তবে এই আজিজ বাহিনীর অত্যাচারে এখনো তিনি সেই এলাকায় যেতে পারছেন না। আজিজকে যাতে কোনোভাবে আদালত জামিন না দেন সেজন্য তিনি প্রশাসনকে নজর রাখার অনুরোধ করেন।
ভুক্তভোগী এরশাদের আইনজীবী মোহম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, এরশাদ আলী বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক মামলাতে ওনাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অনেকগুলো মামলা বিচারধীন অবস্থায় বিভিন্ন আদালতে আছে। তাকে হয়রানি করা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারধীন আছে। এখন যেন অন্তত তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পান, এই প্রত্যাশা।
এমআইকে/ক.ম

