রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠী গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৩৬)। তার আকস্মিক এই মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রিয়া। ভেতরটা ভেঙে চুরমার হলেও দুটি ছোট সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। সন্তানদের মানুষ করার স্বপ্নে তিনি এখন চাকরির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
সরকার নিহত আবুল কালামের পরিবারকে ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই সুযোগটি নিতে চান প্রিয়া। নিজেই চাকরির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গত রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠী গ্রামের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন। গ্রামের ভাই-বোনদের জন্য নিয়মিত অর্থ পাঠাতেন তিনি।
নিহতের ভাবী আসমা বেগম বলেন, ‘সেদিন বেলা ১১টার দিকে কালামের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। সে বলেছিল, শিগগিরই বাড়ি ফিরে সবাইকে দেখবে। কিন্তু ফিরল লাশ হয়ে।’
কালাম ছয় বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। বহু বছর আগে বাবা-মা মারা যান। ভাই-বোনদের কাছেই বড় হয়েছেন তিনি, তাদের প্রতিই ছিল গভীর মমতা। এক ভাই বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় মারা গেছেন আগেই।

বিজ্ঞাপন
কালাম-প্রিয়া দম্পতির দুই সন্তান—ছেলে আবদুল্লাহ (৫) ও মেয়ে সুরাইয়া (৩)। প্রিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন। স্বামীহারা এই তরুণী এখন সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে চান, তাই উপযুক্ত কোনো চাকরির সুযোগ আশা করছেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মো. ফয়জুল কবীর ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেন এবং পরিবারের যোগ্য সদস্যকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরিবার দাবি করেছে, কেবল ক্ষতিপূরণ নয়—দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারও তারা চায়, যাতে কারো অবহেলায় আর কোনো প্রাণ না ঝরে।
নিহতের বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, ‘আমার নিরপরাধ ভাই কার দায়িত্ব অবহেলার কারণে এভাবে মারা গেল? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।’
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকি দাস বলেন, ‘আমরা এই দুর্ঘটনায় গভীরভাবে দুঃখিত। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। সরকার ও জেলা প্রশাসন থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
এম/জেবি

