শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জুলাই সনদ কী, যা আছে অঙ্গীকারনামায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

জুলাই সনদ কী, যা আছে অঙ্গীকারনামায়
জুলাই সনদ কী, যা আছে অঙ্গীকারনামায়

গতকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ স্বাক্ষর করেছেন বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার এই দলিলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও স্বাক্ষর করেছেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন— এ সনদটি আসলে কী? ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ হলো এক ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা চুক্তি বা চিত্রনির্ধারক দলিল। এই সনদে মূলত রাষ্ট্রীয় কাঠামো, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও ক্ষমতার প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কারমূলক অঙ্গীকার রয়েছে। যা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।


বিজ্ঞাপন


কেন এই সনদ তৈরি করা হলো?

একটি বড় রাজনৈতিক উত্তরের পরবর্তীতে স্বৈরাচার-বিরোধী এবং শাসনব্যবস্থার জবাবদিহিতার দাবি তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যমতের কমিশন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে এ সনদ প্রণয়ন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার—এ ছয় বিষয়ে কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

দুই পর্বে মোট ৬৩টি দলের সঙ্গে (প্রথমে ৩৩, পরে ৩০) আলোচনা হয়। তবে জাতীয় পার্টিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ উল্লেখ করে আলোচনায় রাখা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। এসব প্রস্তাব নিয়েই তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, কোনো দল চাইলে পরবর্তীতেও এই সনদে সই করতে পারবে।

জুলাই জাতীয় সনদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে‑ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল/জোট স্বাক্ষর করেছে। অ্যনদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম দল স্বাক্ষর করেনি। 

গতকাল শুক্রবার জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে। 

এদিকে বামদলগুলো জানিয়েছিল, সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না।

জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা 

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার ও ঘোষণা করছি যে-

১। জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

২। যেহেতু জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক, তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ গ্রহণ করেছি বিধায় এ সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব।

৩। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না, উপরন্তু উক্ত সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করব।

৪। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করব।

৫। গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

৬। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান এবং বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

৭। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

এমএইচএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর