ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা পুনর্র্নিধারণ, ভোটার হালনাগাদ, আইন-বিধি সংশোধন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের মতো কাজের বেশিরভাগই এখন শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে ভোটারদের সচেতন করা ও ভোটদানে উৎসাহিত করার কাজে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটারদের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনা করে এই প্রস্তাব ভাবা হচ্ছে। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা এলাকার সবার কাছে পরিচিত এবং সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তাদের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে দ্রুত সচেতনতা তৈরি সম্ভব হবে বলে কমিশনের ধারণা। একই সঙ্গে এতে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু আয় করার সুযোগও তৈরি হবে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের যা যা সক্ষমতা আছে জাতীয়ভাবে তা আমরা ভোটের কাজে লাগাব। এমনকি স্কাউটদের কাজে লাগানোর কথাও ভাবছি। মোদ্দাকথা হচ্ছে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে নির্বাচনের কাজে লাগাব।’
তরুণ ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিভিন্ন মহলের পরামর্শ
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, ‘পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও তরুণদের নিয়ে আমরা যদি একটা কমিটি করি, সেই কমিটি নজরদারি করবে এবং সবকিছুর নজরদারি করবে। যদি তাদের যুক্ত বা সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে দায়িত্ববোধটা কিন্তু বাড়বে।’
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা মনে করছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা আছে পুলিশ, আনসারসহ অন্যরা তা মোকাবিলা নাও করতে পারেন। এজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি স্কুলছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত করার। পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যারা ভোটার না, যারা গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা রেখেছেন ছাত্র-ছাত্রী তাদের কথা বলেছি। সিইসি এপ্রিশিয়েট করেছেন। তিনি বলেছেন খুবই ভালো আইডিয়া।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘সারাদেশের ৫০০ উপজেলার ৬৪টা জেলাতে আমাদের একটা নেটওয়ার্ক আছে। হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী। এদেরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ইসি ভাবতে পারে। আমরা ইসিকে সহযোগিতা করব। আরেকটা জিনিস আমরা বলেছি যে আমাদের এই সময়টাতে বাংলাদেশে প্রায় ২২ লাখ স্কাউট আছে এবং বিএনসিসি প্রায় ২২ লাখ; স্কাউট এবং বিএনসিসি কীভাবে কাজে লাগাতে পারি এই বিষয়গুলো ছিল আমাদের সাজেশনের ভেতরে।’
সঠিক পরিকল্পনা হলে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ফলপ্রসূ হবে
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম মনে করেন, পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা ইতিবাচক ফল দেবে।
ঢাকা মেইলকে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এটা নির্ভর করবে সঠিক পরিকল্পনার ওপর। যদি নির্বাচন কমিশন সঠিক পরিকল্পনা করতে পারে তাহলে এটা সফল হবে। জুলাই আন্দোলনের বড় স্পিরিট ছিল তরুণরা। তাদের সঙ্গে কিন্তু অনেক স্কুল-কলেজ-প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চারাও জয়েন করেছিল তাদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। তাদেরকে রাস্তায় দেখতে পেয়েছি।’
‘এই যে ছোট ছোট বাচ্চারা ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ে এরা অনেকে কিন্তু আবার স্কাউটে কাজ করে। কাজেই জাতির জন্য, একটা ভালো নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের যদি কন্ট্রিবিউশন থাকে সেটা নিঃসন্দেহে ভালো দাবি রাখে। কিন্তু এর জন্য একটা সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে। যদি এটা সফল করা যায় তাহলে তারাও কিন্তু খুশি হবে। আনন্দের সঙ্গে কাজটা করবে যে আমরাও দেশের জন্য এক ধরনের অবদান রাখতে সমর্থ হলাম।’
পাঠ্যপুস্তকে আসছে এনআইডি ও ভোটার তালিকার পাঠ
ভোটার সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে স্কুল পাঠ্যপুস্তকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ভোটার তালিকার গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে ছোট গল্প, নাটিকা, সংলাপ ও প্রবন্ধের খসড়া ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে ইসির কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখন যারা শিশু ও কিশোর রয়েছে তারা যাতে আগে থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারে, সে লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার গুরুত্ব, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ব্যবহার এবং সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল বিষয় যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে পারে সংস্থাটি। এজন্য সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি।
সবশেষে ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৪১ লাখ ৪৫৫ জন এবং নারী ভোটার ৬ লাখ ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন। হিজড়া ভোটার ১২৩০ জন।
এমএইচএইচ/এমআর
