শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মিরপুরে আগুন: ছবি হাতে নিখোঁজ স্বজনদের অপেক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

মিরপুরে আগুন: ছবি হাতে নিখোঁজ স্বজনদের অপেক্ষা

‎রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও কসমিক ফার্মা নামে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পেতে ছবি হাতে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

‎মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিকের শিয়ালবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে।

Nazmul_2
স্বামী নাজমুলের খোঁজে নাসিমা। ছবি: ঢাকা মেইল



‎প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ পোশাক কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশে থাকা রাসায়নিকের গোডাউনেও। খবর পেয়ে একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো। ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর তাদের সঙ্গে সহায়তায় যোগ দেন পাশে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি।

‎তবে এই ঘটনায় এখনও অনেকের খোঁজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান ও এর আশপাশের সড়ক।

‎সরেজমিনে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছেন। ঠিক তার কিছুটা দূরে সেনাসদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। উৎসুক জনতা ও নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে আসা সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

‎শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আমার ভাগ্নী মাহিরা। গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে আমরা তাকে খুঁজছি। আশেপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাইনি। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি তারা বলেছে ধৈর্য ধরতে।  

1000026747
Caption



‎শরীয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার বোন সকাল পৌনে ৮টায় কাজে আসে। সকাল ১১টায় খরব পায় আগুন লেগেছে। সেখানে একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি। এখনো কোনো খোঁজ নাই আমার বোনের। ‎

‎এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে পাঁচ ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে আরও ৭ ইউনিট যোগ দেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকার কারণে কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। 


বিজ্ঞাপন


স্বামী নাজমুলের খোঁজে নাসিমা:

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পাশের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন নাসিমা আক্তার। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গার্মেন্টসে আগুনের ঘটনায় এখনো স্বামী নাজমুল আলমকে খুঁজে পাননি।

নাসিমা জানান, তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তিনি কারখানাটির দ্বিতীয় তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন৷ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার স্বামী ফোন করেছিল। তখন তাকে জানায় যে তাদের কারখানায় আগুন লেগেছে। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। তিনি এরপর বহুবার সেই ফোনে কল করলেও স্বামীর কোনো সাড়া পাননি। 

আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নাসিমা। কিন্তু স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে নিকটস্থ সব হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। কিন্তু কোথাও তাকে পাননি। 
 

নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি: 


নিখোঁজ মাহিরাকে (১৪) খুঁজছেন তার মামা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্নী গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। আগুন লাগার পর থেকে তাকে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। আশপাশের হাসপাতালে গিয়েছি, ফায়ার সার্ভিসে খোঁজ নিয়েছি তারা শুধু ধৈর্য ধরতে বলছেন।’

আরেক স্বজন লাইজু বেগম জানান, তার বোন নারগিস আক্তার সকালে কাজে গিয়েছিলেন, এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই। তিনি বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে খবর পাই আগুন লেগেছে। সেখানকার একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি, কেউ বের হতে পারেনি। তারপর থেকে আর কোনো খবর নেই।’

উৎসুক জনতার ভিড়ে উদ্ধারকাজে বাধা: 

আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ভিড় জমেছে শত শত উৎসুক মানুষের। পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে নিখোঁজদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে শিয়ালবাড়ি এলাকা ও আশপাশের সড়ক।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা: 
ফায়ার সার্ভিস জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। শুরুতে ৫টি ইউনিট কাজ করে। পরে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত মোট ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা উদ্ধার ও উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। পাশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ পোশাক কারখানার ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রাসায়নিক গোডাউনে।দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
 

একেএস/এমআইকে/ক.ম  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর