শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ইভিএম নিয়ে আলোচনায় কী পেল ইসি?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২২, ১০:২৮ এএম

শেয়ার করুন:

ইভিএম নিয়ে আলোচনায় কী পেল ইসি?

একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য বিরোধীতার মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে সংলাপ শেষ করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশের নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি ১১টি। যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ যেসব দল ইভিএমে আগামী নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের চেয়ে বেশি বিপক্ষে বলেছেন। কেউ আবার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।

অন্যদিকে ইভিএম যাচাই-বাছাইয়ে প্রত্যেক দলকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও বেশিরভাগ দল কাউকে নেয়নি। কিছু দলের বিশেষজ্ঞ যারা অংশ নিয়েছেন তারা বৈঠকে কিছু কথা বললেও বাইরে থাকা ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো দূরে থাক ধরেও দেখেননি।


বিজ্ঞাপন


এমন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক শেষে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ইসি। ভবিষ্যতে কী করবে তাও সুস্পষ্ট করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কেউ। তবে তিন দফায় ২৮টি দলের নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া মতামত লিপিবদ্ধ করে যা যাচাই বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, বৈঠকের সব মতামত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো আলোচনা-পর্যারলোচনা করে ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না সেসব বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

evm

এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, তিন দফায় আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন ইসির কর্মকর্তারা। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ততে প্রত্যেকের দেওয়া মতামতের ভিডিও ক্লিপিং করে আকারে তৈরি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ বক্তব্যের সময় কারো কারো শারীরিক অঙ্গভঙ্গি একরকম হলেও কথা বলার ধরণ ভিন্ন ছিল। ফলে ইভিএমের বিষয়ে এসব দলের নেতারা পক্ষে না বিপক্ষে মনোভাব প্রকাশ করেছেন তা পরিষ্কার হতে চায় ইসি।


বিজ্ঞাপন


নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত এমন বৈঠকে কারো দেওয়া বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ ও সারাংশ লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইভিএম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়া এ নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

যদিও বিদ্যমান অবস্থায় ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা নেই ইসির।

ইসি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০’র মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার মেশিন আছে। এ দিয়ে ১০০ আসনের বেশি ভোট করা যাবে না।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির বৈঠক পর্যাললোচনা করে দেখা গেছে, আমন্ত্রণ পেয়েও ইসির বৈঠকে আসেনি বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের শরিক এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।

বিএনপি জোট ছেড়ে আসা আন্দালিব রহমান পার্থের দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও অংশ নেয়নি। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ বৈঠকে যায়নি। আপত দৃষ্টিতে এসব দল ইভিএমের বিপক্ষে। 

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ইভিএমে ভোট চায় না সেকথা ইসিকে জানিয়েছে।

অন্যদিকে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ স্পষ্ট করেই মত দিয়েছে তারা ইভিএমে ভোট চায়। তাদের বেশ কিছু শরিক দলও একই মত দিয়েছে। শরিকদেরই কেউ আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

evm

বৈঠকে আসা নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বাইরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও বিকল্প ধারা ইভিএমের পক্ষে কথা বলেছে। তবে তাদের কেউ আবার এখনো ইভিএমের প্রতি মানুষের পুরোপুরি আস্থা আসেনি এমন মতও দিয়েছেন।

এদের বাইরে জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (একাংশ) নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে ইভিএমে ভোট নিয়ে নিজেদের আপত্তি নেই বলে মত দিয়েছে।

এদের কেউ আবার জাতীয় নির্বাচনে সব নয়, কিছু আসনে ইভিএমে ভোট করায় মত দিয়েছেন। কেউ আবার সব নয়, অল্প আসনে ভোটের কথা বলেছে।

তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সব আসনে ইভিএম ভোট করতে চাইলে সাড়ে তিনলাখের মতো ইভিএম দরকার হবে ইসির।

এদিকে ইসির সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠকে অংশ নেওয়া ১০টি দলের কেউ বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসেননি। পরের দফায় আটটির মধ্যে চারটি দলের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে নিয়ে আসে। আর শেষ দফায় শুধুমাত্র জাকের পার্টি বিশেষজ্ঞ নিয়ে বৈঠকে অংশ নেয়।

দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে বের হওয়া একটি ইসলামিক দলের সঙ্গে আসা বিশেষজ্ঞের কথা বললে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আসলে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এই মেশিন দেখে কিছুই বলা যাবে না। লম্বা সময় যদি কাছে রেখে যাচাই-বাছাই করা যায় এরপরে মতামত দেওয়া উচিত হবে।’

অন্যদিকে নির্বাচন ভবনে যেখানে বৈঠক হয়েছে তার বাইরে প্রতিদিনই ইভিএম নিয়ে ইসির কর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন। কারো কোনো ধরণের কৌতুহল বা প্রশ্ন থাকলে তারা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ দলের নেতাদের ইভিএম দেখার প্রতি আগ্রহই দেখা যায়নি।

এদিকে শেষ দিনের সংলাপ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করবো সেটা আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা ইভিএমের অন্ধ গ্রাহক ছিলাম না। সব আলোচনা লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতগুলো তা দেখব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। সম্পূর্ণ বা ফিফটি ফিফটি করব কি-না সে সিদ্ধান্ত নেব।’

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর