জাতীয় শহীদ মিনারে আজ সকাল থেকেই ছিল শোক ও শ্রদ্ধার মিছিল। বৃষ্টিস্নাত সকালে ভিজে প্রাঙ্গণে পা ফেলছিলেন একে একে শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী ও অসংখ্য শিক্ষার্থী। সবার হাতে ফুল, চোখে শোক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে তারা জড়ো হন জাতীয় শহীদ মিনারে।
বৃষ্টির ফোঁটার মতোই ঝরে পড়ছিল স্মৃতিচারণা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা। সবাই বলছিলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এক উজ্জ্বল বুদ্ধিজীবী, যিনি তার প্রজ্ঞা ও মানবিকতার মধ্য দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, লেখক আহমেদ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, সাহিত্যিক খায়রুল আলম সবুজসহ শিক্ষাঙ্গন ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক বিশিষ্টজন।
এ ছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাসস, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ছাত্র ইউনিয়ন, রফিক আজাদ স্মৃতি পর্ষদ, নগর গবেষণা কেন্দ্র, গীতিকবি শহিদুল্লাহ ফরায়েজী, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বদিউর রহমান, মুমিত আল রশিদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সংগঠন এবং বিশিষ্টজনেরা। গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে সবাই শ্রদ্ধা করতো। তিনি অনেক পরিবেশ ইস্যুতে আমার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছেন। অনেক সময় ভিন্নমতও দিয়েছেন, কিন্তু তা সবসময়ই ছিল নীতির জায়গা থেকে। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ, নিঃস্বার্থ ও স্পষ্টভাষী শিক্ষক, যার অবস্থান কখনোই ব্যক্তিস্বার্থের ওপর নির্ভর করেনি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, লেখকদের তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন। নিজে থেকেই বলতেন, ‘তোমার লেখাটা পড়েছি, খুব ভালো হয়েছে।’ এমন উদার হৃদয়ের মানুষ খুব বিরল। তার চলে যাওয়া আমাদের সাহিত্য–সমাজের জন্য বড় ক্ষতি।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে চিত্র সমালোচনা তেমন বিকশিত হয়নি, সেখানে মনজুরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চিত্রকলা বুঝতেন, অনুবাদ করেছেন শেক্সপিয়রের নাটক, ইংরেজিতেও সাহিত্য রচনা করেছেন। এমন বিরল একজন মানুষ, যার মধ্যে বিনয়ের কোনো অভাব ছিল না। তার জীবন ও কাজ আমাদের জন্য চিরদিন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

অধ্যাপকের বোন সাইদা সাত্তার বেবী বলেন, হাসপাতালে যে ক’দিন ছিলাম, আমার ভাইয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, শুভানুধ্যায়ীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, তাতে আমার সত্যি মনে হয়েছে যে আমার ভাই আসলেও একজন ভালো শিক্ষক তো ছিলেনই, তার সাথে সাথে তিনি সকলের প্রাণের মানুষ ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পুনরায় শ্রদ্ধা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তখন নীরব, ভারাক্রান্ত। জানাজা শেষে তাকে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বাংলা সাহিত্য, শিক্ষা ও চিন্তার জগতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করবে এমনটাই বিশ্বাস করেন সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীরা। সবাই বলছেন, তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা, যার অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন অনুভূত হবে।
এম/এফএ

