অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন ভোটারবিহীন হওয়ায় নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলেই নির্বাচন কমিশন সফল হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
হারুন জামিল বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভোটার ছাড়া নির্বাচন। এর কারণে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা, মৃত ও ভুয়া ভোটারদের বাদ দেওয়া এবং আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক কর্মসূচিও দেখছি, এজন্য ধন্যবাদ জানাই।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আইনের প্রয়োগ এবং সাংবিধানিক ক্ষমতা দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক ইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যদি একবার প্রমাণিত হয় যে ইসি মেরুদণ্ডহীন, তাহলে মানুষ তাদের প্রতি আর আস্থা রাখবে না। এজন্য আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। এখন সমাজ অনেক বিভাজিত। একজন যা করবেন, অন্যজন তা পছন্দ নাও করতে পারেন। আবার অন্যজন যা করবেন, তা সবার পছন্দ নাও হতে পারে। গত তিনটি নির্বাচনে কোনো অংশগ্রহণমূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হয়নি। সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন পক্ষ বারবার সবাইকে নির্বাচনে ফেরানোর কথা বলছে।
তিনি বলেন, আগের সরকারের তিনটি নির্বাচনের সময় কেউ প্রকাশ্যে এসব কথা বলার সুযোগ পায়নি। রাষ্ট্র ও সমাজে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
ভোটাধিকার না থাকায় তরুণরা রাস্তায় নেমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলন শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল না। নতুন প্রজন্ম যারা রাস্তায় নেমেছে, তারা বড় হয়ে দেখেছে দেশে কোনো ভোটাধিকার নেই। ২৫-২৬ বছরের তরুণরা জীবনে কোনো ভোট দিতে পারেনি। এই ক্ষোভ থেকেও আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে ইসিকে তরুণ প্রজন্মের মানসিকতা ও অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সমাজ বদলে গেছে। এখন মানুষের হাতে হাতে সোশ্যাল মিডিয়া। গণমাধ্যমের জন্যও এটি বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো গণমাধ্যম মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে সেটি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। পরে বড় বড় গণমাধ্যমও নিজেদের প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত সঠিক তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং সব সময় বস্তুনিষ্ঠ ও হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা। এতে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে কর্মসূচি করলেই হবে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিতে হবে। সময় খুব বেশি নেই। যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তবে এখনই মাঠ পর্যায়ে যাওয়া দরকার। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকার বাইরে বসবাস করে এবং তারা ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। আপডেটেড এই সমাজে যদি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করা যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সফল হবে। গোটা জাতি সেই প্রত্যাশাতেই তাকিয়ে আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএইচ/এআর

