গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দেশব্যাপী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেব, আপনাদের সারা দেশে নিজে নিজে ফ্ল্যাট বানাতে হবে না। আপনারা চাইলে ব্যাংক, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিংবা বেসরকারি ডেভেলপারদের সঙ্গে পার্টনারশিপে যেতে পারেন। শুধু ঢাকায় নয়, রিহ্যাবের মতো সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে দেশের অন্যান্য জেলাতেও আবাসন প্রকল্প পরিচালনা করা সম্ভব।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, বরং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করেই বসতি গড়ে তুলতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সেই বাস্তবতায় এখন থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না নিলে বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসন একটি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) এবং করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
বিজ্ঞাপন
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু সহনশীল আবাসন নির্মাণে মডেল প্রকল্প গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বার্থে একপাক্ষিক নগরায়ণ ও আবাসন ব্যবস্থা সমতা ও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সংকুচিত করছে। ফলে একজন বিত্তশালী একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক হলেও একজন মধ্যবিত্ত নাগরিক একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। বসতি নিশ্চিত করা তাই রাষ্ট্রের সংবিধানসম্মত দায়িত্ব এবং মানবাধিকারের অংশ হওয়া উচিত।
সবার জন্য পরিবেশবান্ধব, দুর্যোগ-সহনশীল ও বিকেন্দ্রীকৃত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বসতি কোনো বিলাসিতা নয়, এটিকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাইলে একটি বছর পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করতে পারি। নদীভাঙনে যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন, স্থানীয় ডিসিদের সহায়তায় তাদের তালিকা করে নিজ এলাকায় কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়, তা পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, বস্তিতে যেন কেউ বসতি গড়তে বাধ্য না হয়, সেটিই হওয়া উচিত আমাদের মূল লক্ষ্য। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ চাইলে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করতে পারে। যেখানে সমস্যা, সেখানেই স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। আমাদের দেশে অনেক খাস জমি দখল ও অব্যবহৃত পড়ে আছে। সেসব জায়গায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম। আরও ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম, গৃহায়ণ অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী বেগম, রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।
এএইচ/ক.ম

