বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘কোম্পানিগুলোর কূটকৌশলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিলম্ব’ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘কোম্পানিগুলোর কূটকৌশলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিলম্ব’ 
‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ’ বিষয়ক অনুষ্ঠান। ছবি: ঢাকা মেইল

তামাক কোম্পানিগুলোর নানা কূটকৌশলের কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বিলম্ব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রানিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, তামাক কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কোনোভাবেই স্টেকহোল্ডার হতে পারবে না। সরকার কোনো অবস্থাতেই এরকম জনস্বার্থবিরোধী কাজ করবে না। তামাক কোম্পানির নানা কূটকৌশলের কারণেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এতদিন বিলম্ব হয়েছে। আর দেরি করা যাবে না।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবিতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডর্‌প আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রানিসম্পদ উপদেষ্টা এসব বলেন।


বিজ্ঞাপন


তরুণদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, যেভাবে তরুণরা বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে দূর করেছে, সেভাবে তামাককেও নির্মূল করতে হবে।  

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্‌প’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্‌প’র প্রকল্প সমন্বয়কারী জেবা আফরোজা।

উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।


বিজ্ঞাপন


উপদেষ্টা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নানা কূটকৌশল করছে। তাদের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে তাই সামনে কথা বলার তো নৈতিক অবস্থান নেই। যে কারণে এরা নীতিনির্ধারকদের কাছে পেছনের দরজা দিয়ে পৌঁছার চেষ্টা করে।

তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো উপহার না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এরা সিএসআর ফান্ড থেকে অনেক সময় স্পন্সর হয়। দেখায় ভালো কাজ করছে। কিন্তু এরা তো মানুষ হত্যাকারী। তাদের থেকে কোনো সহযোগিতা নেয়া ঠিক না।

নারীদের মধ্যে ধুমপানের প্রবণনা বাড়ছে এমনটা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অনেকে স্মার্ট দেখাতে, কেউ কেউ আবার নারীবাদী হতে হাতে সিগারেট হাতে তুলে নিচ্ছে। বিশেষ করে ই-সিগারেট বেশি খাচ্ছে। অথচ ধুমপান বন্ধে নারীদের ভূমিকা রাখা উচিত। কারণ তার বাবা-ভাই, স্বামী-সন্তান ধুমপান করলে তিনি পরোক্ষ ধুমপানের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। যেটা সরাসরি ধুমপানের চেয়ে কম না। 
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ (প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন) মারা যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়। অথচ, টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিগুলো মুনাফার আশায় মিথ্যা প্রচার করে বলছে যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

আখতারউজ-জামান বলেন, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে সুস্পষ্ট যে, তামাকের ব্যবহার কমলেও সরকারের রাজস্বে প্রভাব পড়ে না।
 
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, গত ১৩ জুলাই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের খসড়া পর্যালোচনার জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেছে যে তারা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের “স্টেকহোল্ডার আলোচনায়” আমন্ত্রণ জানাবে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, সরকার এখনো তামাক নিয়ন্ত্রণকে রাজস্ব আয়ের চশমা দিয়ে দেখছে। এটি কেবল গুরুতর নৈতিক ও আইনি উদ্বেগই তৈরি করছে না, বরং এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির মৌলিক দ্বন্দ্বকে উপেক্ষা করার শামিল।

সাবেক সচিব মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ, বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তামাকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে সচেতন করা না গেলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। অতএব, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পেতে হবে জনস্বাস্থ্যের—টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থের নয়—এবং টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির মতামত নেওয়ার জন্য কোনো পরামর্শ সভা আয়োজন করা যাবে না। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এফসিটিসি ৫.৩ প্রতিপালনের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত এই নীতিমালা লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই।

বিইউ/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর