রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নবজাতকের মুখটিও দেখে যেতে পারলেন না ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

নবজাতকের মুখটিও দেখে যেতে পারলেন না ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা
টঙ্গীতে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ নুরুল হুদা একদিন পর মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
  • স্ত্রী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা
  • পুরো পরিবারে শোকের ছায়া
  • ছেলের শোকে মা পাগলপ্রায়

আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। তারপরই পৃথিবীর আলো দেখবে গর্ভে থাকা নবজাতক। কিন্তু তার আগেই বাবা চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। প্রিয় সন্তানকে দেখা হলো না বাবার। সারাজীবন বাবার আদর–স্নেহ ছাড়াই কাটবে শিশুটির জীবন।


বিজ্ঞাপন


বলছি গাজীপুরের টঙ্গীতে আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুরে মারা যাওয়া ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার কথা।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা পাগলপ্রায়। বাবাও নির্বাক। আত্মীয়–স্বজনরা তাঁদের ঘিরে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মা হাহাকার করছেন, অঝোরে কাঁদছেন। এ কান্না–কষ্টের কোনো মাপকাঠি নেই, নেই মাপার যন্ত্র।

বুধবার বিকেলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিচতলায় হাসপাতালে স্টিলের চেয়ারে বসে বিলাপ করছিলেন নুরুল হুদার মা। পাশে এক নারী তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

চারদিকে পিনপতন নীরবতা। এ যেন শোকের সাগরে ডুবে গেছে সবাই। নির্বাক ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। স্বজনদের চোখে শুধু জল। নুরুল হুদার মায়ের কান্না কেউ থামাতে পারছিল না।


বিজ্ঞাপন


picture
নুরুল হুদার মৃত্যুর পর হাসপাতালে বিলাপ করছেন তাঁর মা। এ সময় স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন। ছবি: ঢাকা মেইল। 

‘বাবারে’ ‘কলিজারে’ বলে বিলাপ করে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর কান্নায় তখন পুরো হাসপাতালের নিচতলায় লোকজন ভরে যায়। সবার প্রশ্ন, কী হয়েছে, কেন কাঁদছেন? কিন্তু যখন তাঁরা শুনলেন আগুনে দগ্ধ ছেলের মৃত্যু হয়েছে, তখন আফসোস করলেন, কেউ–কেউ চোখের জলও মুছলেন।

নুরুল হুদার বাবা তাঁর মায়ের পেছনে বসেছিলেন। কথা বলার চেষ্টা করতেই তিনি বলে উঠলেন, বাবারে এসব লিখে আর কী হবে! সে তো চলেই গেছে। থাক, কিছু লেখা লাগবে না।

পরে নুরুল হুদার বোন এসে তাঁর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন।

এ সময় কথা হয় নুরুল হুদার দুলাভাই সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ভাবী অন্তঃসত্ত্বা। তিনি ৯ মাসের গর্ভবতী। সন্তান প্রসবের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। কিন্তু তার আগেই তো ভাই চলে গেলেন! সন্তানের মুখটাও দেখা আর হলো না। ভাবী অসুস্থ বলে তাঁকে আনা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, নুরুল হুদাই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় তাঁদের গ্রামের বাড়ি। তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন। বড় ভাই কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। নুরুল হুদার দুই সন্তান—একজনের বয়স ১০ বছর, আরেকজনের তিন। মেয়েটি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, ছেলেটি এখনো পড়াশোনা শুরু করেনি।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে নুরুল হুদার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর লাশ নেওয়া হবে গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাঁকে দাফন করবেন স্বজনেরা।

সোমবার বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেটসংলগ্ন গুদামে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যান। তাঁরা আগুন নেভাচ্ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে সেদিন বিকেলেই জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে মঙ্গলবার মারা যান ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, আর আজ বিকেল পৌনে তিনটায় মারা গেলেন নুরুল হুদা। বাকি দুজন এখন চিকিৎসাধীন। তাঁদের একজনের অবস্থা ভালো, আরেকজন ৪২ শতাংশ দগ্ধ।

এমআইকে/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর