ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি করে দশ বছরের সাব্বির রহমান। প্রতিদিন সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই কাজ করে যায়। প্রতিটি গাড়ি, রিকশা ও পথচারীর দিকে তাকিয়ে সে বিক্রির সম্ভাবনা খোঁজে। রাস্তার হর্ন, মানুষের চিৎকার এবং ফুটপাথের ভিড় ঠেলেই সে এই কাজ করে যায়। পড়াশোনার জন্য বইপত্র তার কেনা হয়নি, কারণ স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাবা মুন্না চট্টগ্রামে রিকশা চালান, মা থাকেন বরিশালে গ্রামের বাড়িতে। অভাবের সংসারে শিশুশ্রমই হয়ে উঠেছে সাব্বিরের একমাত্র উপার্জনের পথ।
সাব্বিরের মতো শিশুদের প্রতিদিনের জীবনই কঠোর শ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাটে। কৃষি ও গৃহকর্মসহ বিভিন্ন খাতে শিশুদের শ্রম দিতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুশ্রমের হার বিশ্ব গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বে যেখানে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ শিশু শ্রমবাজারে নিযুক্ত, সেখানে শুধু বাংলাদেশেই প্রায় ৫০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে। ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে সাব্বির যে ক্লান্তি, অস্থিরতা এবং স্বপ্নহীনতার মধ্যে কাজ করছে, তা দেশের শিশুশ্রমের একটি স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি, যা প্রতিদিন হাজার হাজার শিশুর ভবিষ্যৎ কেটে নিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে, যা বৈশ্বিক শিশু জনসংখ্যার প্রায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন শিশুশ্রমিকের মধ্যে দুজন বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করছে। বয়সভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি কিশোর বয়সী (১৫–১৭ বছর) এবং প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু এখনো ১৫ বছরের নিচে। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছেলে শিশুরা মেয়ে শিশুদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে; তবে মেয়েরা গৃহস্থালি কাজ ও অদৃশ্য শ্রমে বেশি জড়িয়ে পড়ছে।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে কৃষিখাত এখনো সবচেয়ে বড় অংশীদার, যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬১ শতাংশ শিশুশ্রমিক নিয়োজিত। সেবা খাতে রয়েছে ২৭ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ১৩ শতাংশ শিশু। যেসব শিশু মেশিন, রাসায়নিক বা দীর্ঘ সময়ের কাজে নিয়োজিত, তাদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার হারও ভয়াবহ। বিশ্বব্যাপী স্কুলপড়ুয়া বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা শ্রমে নিয়োজিত, তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এ হার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও বেশি, যেখানে প্রায় ৪২ শতাংশ শিশুশ্রমিক স্কুলের বাইরে।
দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা বলছে, ২০০০ সালে যেখানে বিশ্বে প্রায় ২৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু শ্রমে ছিল, ২০২৪ সালে এসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখে। তবে অগ্রগতি থেমে থেমে হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে শিশুশ্রমের হার বেড়েছিল, কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ২ কোটির বেশি কমেছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ বলছে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুশ্রমে যুক্ত। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ২০১৩ সালের জরিপের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের হার কিছুটা কমলেও সামগ্রিক হারে তেমন উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে কৃষি ও অনানুষ্ঠানিক খাতেই শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি। সরকার শিশুশ্রম নিরসনে নানা নীতি, আইন ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমের অবসান ঘটানো। কিন্তু বর্তমান গতিপ্রকৃতি বলছে, সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য হ্রাস, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং কার্যকর আইন প্রয়োগ ছাড়া শিশুশ্রম নির্মূল করা যাবে না। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এজন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশু সরাসরি শ্রমে যুক্ত এবং ১৭ লাখ ৬০ হাজার শিশু কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। শ্রমে যুক্তদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, বিশেষ করে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে তাদের অংশগ্রহণ বেশি।
গ্রামীণ এলাকায় শিশুশ্রমের প্রকোপ সর্বাধিক। পল্লী অঞ্চলে ২৭ লাখ ৩০ হাজার শ্রমজীবী শিশুর মধ্যে ১৩ লাখ ৩০ হাজার শিশু শ্রমে যুক্ত, আর শহরাঞ্চলে ৮ লাখ ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৪ লাখ ৪০ হাজার শ্রমে নিয়োজিত। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে গ্রামে ৮ লাখ ২০ হাজার এবং শহরে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু রয়েছে।
এই বয়সসীমার মোট শিশু জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার, যেখানে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক (৫৫ দশমিক ২ শতাংশ)। জরিপে আরও দেখা যায়, শ্রমে যুক্ত শিশুদের ৮২ শতাংশ নিজ বাড়িতে বসবাস করে। কর্মক্ষেত্রের ধরনে উৎপাদনে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষি ও মৎস্য খাতে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু নিযুক্ত। স্কুলে উপস্থিতির হার মাত্র ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ হলেও শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি (৫২ দশমিক ২ শতাংশ) পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
গড়ে একজন শিশু শ্রমিক মাসে আয় করছে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এছাড়া গৃহকর্মী হিসেবে প্রায় ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু কাজ করছে, যাদের মধ্যে মাত্র ৮০ হাজার পারিশ্রমিক পায়; বাকিরা বিনা মজুরিতে কাজ করছে, যেখানে নারী শিশুর সংখ্যা বেশি। খাতভিত্তিক হিসেবে কৃষিতে ১০ লাখ ৭০ হাজার, শিল্পে ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং সেবা খাতে ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। জরিপ–২০২৩ এ পাঁচটি খাতকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে শিশুশ্রম এখনো ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে এবং তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০’, ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’, জাতীয় ও বিভাগীয় শিশুশ্রম কল্যাণ কাউন্সিল, জেলা ও উপজেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া সচেতনতা বাড়াতে বহু কর্মশালা আয়োজনের কথাও মন্ত্রণালয় জানায়। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। গত দুই দশকে শিশুশ্রম নিরসনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মাত্র এক লাখ শিশুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশুদের কতজন প্রকৃতপক্ষে শ্রম থেকে সরে এসেছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই।
২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিরসন’ প্রকল্পের প্রথম দুই পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজার শিশুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তী তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৫০ হাজার শিশুকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়। চতুর্থ পর্যায়ে প্রায় ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ শিশুকে শ্রম থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় এক লাখ শিশুকে ছয় মাস মেয়াদি উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাস মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।
কথা হয় সাব্বির রহমানের সঙ্গে। সে জানায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি করে। কখনো সূর্যের গরম, আবার কখনো বৃষ্টিভেজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গাড়ির হর্ন, মানুষের ভিড়, অনেক সময় পুলিশের ধমক—সবকিছু সহ্য করতে হয়। বই-খাতা কেনার টাকা নেই। বাবা-মা দুজনের কেউ কাছে থাকে না, খালুর কাছে থাকে সে। সংসারে খাবারের টাকাই ঠিকমতো জোটে না, তাই সে বের না হলে ঘরে রান্নার হাঁড়ি চড়বে না বলে জানায় সাব্বির।
সাব্বিরের ভাষায়, আমি প্রতিদিন সকালেই বের হয়ে যাই। হাতে কিছু টাকা না থাকলে মা ফোনে কাঁদে—বলে সংসার কেমন করে চলবে। তাই রাস্তার ভিড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি করি। রোদে মাথা গরম হয়ে যায়, আবার বৃষ্টি এলে ভিজে কাপড় শুকাতে সময় লাগে না। গাড়ির হর্নে কান ঝালাপালা হয়, অনেক সময় রাস্তায় ধাক্কা খাই। অনেক সময় খুব ক্লান্ত হয়ে যাই, পা ব্যথা করে, তবু থামতে পারি না। কারণ আমি না বের হলে আমাদের চুলা জ্বলে না। রাতে বাসায় ফিরলে মনে হয় আজও কিছুই করতে পারলাম না।
সাব্বিরের মতো শিশুরা প্রতিদিন রাস্তার ভিড়ে, ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে শ্রমের ভার বহন করছে। প্রতিটি বিক্রি তাদের জন্য অর্থ, কিন্তু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফুটপাথ, রাস্তার কাদা, গাড়ির হর্ন—এসবই তাদের ছোট দেহের ওপর চাপ ফেলে। এই শিশুশ্রম শুধু বর্তমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেও বিনষ্ট করে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকেও সীমিত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুশ্রমের সমস্যা কেবল আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সমাধান হয় না। দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা, শিশুরা যেন স্কুলে যেতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করা, শ্রম আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ ও মনিটরিংব্যবস্থা শক্তিশালী করা—সবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গৃহকর্ম ও কৃষি খাতে শিশুদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতি গ্রহণ ও তদারকি অপরিহার্য। সামাজিক সচেতনতা, পরিবারের মানসিকতা পরিবর্তন এবং শিশু অধিকার সংক্রান্ত শিক্ষা—সব মিলিয়ে শিশুশ্রম প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া শিশু অধিকার সুরক্ষা, শিক্ষার প্রসার এবং শ্রম নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ এখনই অপরিহার্য। শুধু তখনই বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ভয়াবহতা কমিয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ, শিক্ষিত ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাবা-মায়ের কর্ম থাকলে শিশুদের শ্রমের দিকে যেতে হয় না। কিন্তু বাবা-মায়ের বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণেই শিশুরা শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে বড়দের জন্য, আর এই দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। রাষ্ট্রই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা বলেন, ‘যেসব শিশু কাজে যাচ্ছে, তারা পরিবারের আয়ের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। ফলে শিশুশ্রম দীর্ঘদিন ধরেই সমাজে বিদ্যমান। একটি রাষ্ট্র পরিবারের নিরাপত্তা দিতে না পারলে, বাবা-মায়ের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা না থাকলে বাধ্য হয়েই বাচ্চাদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে হয়। ছোটবেলা থেকেই শিশুরা কাজ শিখে ফেলে, পরিবারের সহযোগিতা করতে করতে ধীরে ধীরে শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘কোনো বাবা-মা ইচ্ছে করে সন্তানকে কাজে পাঠাতে চান না। কিন্তু পরিবারে যদি অনেক সন্তান থাকে এবং তাদের খাওয়ানোর সামর্থ্য বাবা-মায়ের না থাকে, তখনই তারা কাউকে না কাউকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়। যদিও বর্তমানে এ প্রবণতা কিছুটা কমেছে, তবু সমস্যাটি পুরোপুরি সমাধান হয়নি। আসলে সমস্যার মূল কারণ হলো নিম্ন আয় ও কর্মসংস্থানের অভাব। তাই রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। রাষ্ট্র যথাযথভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলে ধীরে ধীরে শিশুশ্রম থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে।’
এএইচ/জেবি

