নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন করা লাগে। ২০০৮ সাল থেকে চালু করা এই নিয়মে অর্ধশতাধিক দল ইতোমধ্যে নিবন্ধন পেয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু দল সব শর্ত পূরণ না করায় নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত অনেকেই নিবন্ধন পেয়েছে। ইসিও আদালতের নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে নিবন্ধন দিয়েছে। তবে এবার হুট করে আদালতে যাওয়ার পথ কঠিন করছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে আদালতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। আগে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পরও অনেক দল আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে। এবার ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কোনো দল নিবন্ধন না পেলে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে কোন কোন শর্ত পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে কোনো দল আদালতে গেলেও সরাসরি নিবন্ধন আদায় সম্ভব হবে না। শর্ত পূরণ না হওয়ায় আদালতও বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ইসির দেওয়া কারণকে ভুল প্রমাণ করতে হবে।
ইসি কর্মকর্তাদের মতে, এই পদক্ষেপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে এবং যোগ্যতা অর্জন না করা দলগুলোর নিবন্ধন পাওয়া কঠিন হবে।
বিজ্ঞাপন
আদালতের রায়ে নিবন্ধন পাওয়ার যত নজির
ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত ৫১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ১১টি আদালতের রায়ে নিবন্ধন পেয়েছে। গত কয়েক বছরে আদালতের আদেশেই নিবন্ধন পায় আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি।
এর আগে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে আদালতের নির্দেশে তৃণমূল বিএনপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ জাসদ নিবন্ধন পায়। এসব উদাহরণে দেখা গেছে, কমিশন শর্ত পূরণ না করায় আবেদন বাতিল করলেও আদালতের আদেশে দলগুলো নিবন্ধন পেয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগে নিবন্ধন না দেওয়ার কারণ লিখিতভাবে জানানো হতো না। এতে অনেক দল আদালতের মাধ্যমে সহজেই নিবন্ধন আদায় করত। এখন থেকে কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হবে। ফলে আদালতও যাচাই না করে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
নিবন্ধন পাওয়ার অপেক্ষায় বেশ কিছু দল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার ১৪৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন সেসব তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আর ১২১টি দলকে অযোগ্য বিবেচনা করে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি।
নিবন্ধনের কাজ অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আরও চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে। (সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন) যাচাই-বাছাই করছি; তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করছি।’
কোন কোন দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে তা নিয়েও আভাস দিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। কমিশন সভায় আলোচনা হলে প্রয়োজনে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্তও হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কানাডা সফরে রয়েছেন, মধ্য সেপ্টেম্বর নাগাদ ফিরবেন।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কারা নিবন্ধন পাচ্ছে সে সিদ্ধান্ত শিগগির হবে, আরও যাচাই হচ্ছে।’
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম-কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে এসব নিয়ম-কানুনই সাধারণত খেয়াল করা হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে মনোনীত দলগুলোর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে দাবি-আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে কমিশন। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে সংস্থাটি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
আরও পড়ুন
ভোটে অযোগ্য হচ্ছে ফেরারি আসামি
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
এমএইচএইচ/জেবি

