রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সংসদের ৪৬ আসনের সীমানায় পরিবর্তন, বাড়ল-কমল কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১০ এএম

শেয়ার করুন:

সংসদের ৪৬ আসনের সীমানায় পরিবর্তন, বাড়ল-কমল কোথায়?
সংসদের ৪৬ আসনের সীমানায় পরিবর্তন, বাড়ল-কমল কোথায়?

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ৪৬টির সীমানায় পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হামিদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়ানো হয়েছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গাজীপুরে আসন বেড়ে হয়েছে ছয়টি এবং বাগেরহাটে কমে হয়েছে তিনটি। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ছয়টির সীমানা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এর আগে, গত ৩০ জুলাই খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ইসি, যেখানে ৩৯টি আসনের সীমায় আংশিক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তবে পরে দাবি-আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত তালিকায় পরিবর্তনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬টি আসনে।

গাজীপুরে আসন বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে স্থানীয় জনগণ। খসড়াতেই এই আসন বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল এবং এলাকাবাসী তা স্বাগত জানায়। পরে চূড়ান্ত তালিকায় সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

অপরদিকে, বাগেরহাটে একটি আসন কমানো নিয়ে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি বাদ দেওয়ায় সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এমনকি নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে আসন পুনর্বহালের দাবি জানায়। কিন্তু এসব আপত্তি আমলে নেয়নি ইসি। চূড়ান্ত তালিকায় বাগেরহাটে তিনটি আসনই বহাল রাখা হয়েছে।

ইসির চূড়ান্ত তালিকায় যে ৪৬টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-১ ও ৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, ৩ ও ৪, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৪, ৫, ৭, ১০ ও ১৪, গাজীপুর-১, ২, ৩ ও ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, ফরিদপুর-২ ও ৪, শরীয়তপুর-২ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ৬ ও ১০, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭ ও ৮।


বিজ্ঞাপন


প্রতিটি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণে ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট এলাকা অন্তর্ভুক্ত বা বাদ দেওয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রশাসনিক কাঠামো এবং স্থানীয় দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করা হয়েছে।

খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে ইসির কাছে ৩৩ জেলার ৮৪টি আসন সম্পর্কিত ১,১৮৫টি আপত্তি এবং ৭০৮টি পরামর্শ জমা পড়ে। এরপর ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ইসি জানায়, শুনানিতে উপস্থাপিত তথ্য, যুক্তি ও মতামতের আলোকে চূড়ান্তভাবে ৩০০টি আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সীমানা অনুযায়ীই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সীমানা পরিবর্তনের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনৈতিক প্রার্থী, দল এবং ভোটারদের প্রস্তুতিও কিছুটা নতুনভাবে সাজাতে হতে পারে। সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে কিছু পুরনো এলাকা নতুন আসনে চলে গেছে, আবার কিছু নতুন এলাকা সংযুক্ত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনী স্বচ্ছতা, ভোটের ভারসাম্য এবং সাংবিধানিক ম্যান্ডেট রক্ষার স্বার্থেই এই সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো এলাকায় এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বাগেরহাটে আসন কমানোকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ এখনো বিদ্যমান।

এদিকে গাজীপুরের মতো জনবহুল ও দ্রুত নগরায়ণ হওয়া এলাকাগুলোর সীমানা পুনর্গঠনে স্থানীয়ভাবে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেই এসব এলাকায় অতিরিক্ত আসন বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।

এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন করল নির্বাচন কমিশন। এখন পরবর্তী ধাপ হিসেবে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা হালনাগাদ, মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর