চোখের সামনে গরম কেক বের হচ্ছে ওভেন থেকে, ভেসে আসছে মিষ্টি সুবাস। ক্রেতা অপেক্ষা করছেন সদ্য প্রস্তুত খাবারের জন্য। ঢাকার অলি-গলিতে এমন দৃশ্য এখন আর অচেনা নয়। দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন খাদ্য সংস্কৃতি ‘লাইভ বেকারি’। যেখানে শুধু খাবার কেনা নয়, বরং তৈরি হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটাই উপভোগ করছেন গ্রাহকরা। এই অভিজ্ঞতা যেন একসঙ্গে খাবার, বিনোদন ও আস্থার মেলবন্ধন।
সাধারণ বেকারিতে পণ্য আগে থেকে তৈরি হয়ে আসে। কিন্তু লাইভ বেকারির বিশেষত্ব হলো, এখানে গ্রাহক নিশ্চিত হচ্ছেন খাবারের তাজা অবস্থার ব্যাপারে।
বিজ্ঞাপন
তবে এর মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। এই বেকারিগুলোতে পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। কারণ প্রতিটি জিনিস নতুন করে বানানো হয়। পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন হওয়ায় খরচও বাড়ে।
যা বলছেন ক্রেতারা
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দিন দিন ‘লাইভ বেকারি’র জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ দিবস ও পারিবারিক আড্ডায় অনেকে এখন ‘লাইভ বেকারি’কে বেছে নিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
ক্রেতারা বলছেন, লাইভ বেকারির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তাজা খাবার। বাজারে অনেকদিনের রাখা কেক বা ব্রেড পাওয়া গেলেও এখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে বানানো খাবার পাচ্ছেন তারা।
বাড্ডা লিংক রোডের একটি লাইভ বেকারিতে কেক কিনতে আসা মাসুমা ইয়াসমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, “এখানে এসে মনে হয়, আমি শুধু খাবার কিনছি না, বরং এক ধরনের অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। আগে বাচ্চাদের জন্য কেক কিনে নিয়ে ভয় হতো, পুরনো কি না। এখন চোখের সামনে বানাতে দেখি, নিশ্চিন্ত মনে খাওয়াই।”
উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশে কয়েক বছর আগেও লাইভ বেকারি তেমন পরিচিত ছিল না। সাম্প্রতিক রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে এর বাজার দ্রুত বাড়ছে। ‘লাইভ বেকারি’ ব্যবসা শুধু খাবারের গুণগত মানই নয়, গ্রাহকের আস্থাও বাড়ায়।
নিউ মার্কেটের বেকারি মালিক শাহ জামাল বলেন, “আমরা চেয়েছি মানুষ যেন তাদের খাবার কীভাবে তৈরি হয় তা কাছ থেকে দেখতে পারে। এতে স্বচ্ছতা থাকে, আর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না।
‘মানুষ এখন খাবারে গুণগত মান খোঁজে। তাই আমরা চাই গ্রাহক নিজের চোখে দেখুক কীভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে আস্থা যেমন বাড়ে, বিক্রিও তেমনি বেড়েছে।’
উদ্যোক্তাদের মতে, লাইভ বেকারি চালাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাস খরচ। এছাড়া প্রশিক্ষিত কর্মী রাখাও ব্যয়সাপেক্ষ।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণ প্রজন্মের ভোগ সংস্কৃতি ক্যাফে, ফুড কোর্ট বা লাইভ কুকিং সবই এখন সামাজিক যোগাযোগের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ও খাদ্য সচেতন মানুষ এই ধারণাকে আরও ইতিবাচকভাবে নেবে। ফলে লাইভ বেকারি ভবিষ্যতে শহুরে খাদ্য সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে লাইভ বেকারির খাবার তুলনামূলক নিরাপদ মনে করলেও কোনো কোনো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সতর্কও করছেন।
তাদের মতে, সব বেকারি সমান মান বজায় রাখে না। যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না হলে বা উপকরণ মানসম্মত না হলে লাইভ দেখানোই যথেষ্ট নয়। তাই নজরদারি জরুরি। এছাড়া খাবারের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বেকারির পণ্যে স্পষ্টভাবে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ এবং উপাদান উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “পাউরুটি বা কেক মিষ্টি করার জন্য যে রাসায়নিক উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো আমাদের লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এসব উপাদান গ্রহণ করলে হজমজনিত জটিলতা, লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস এমনকি দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, বেশিরভাগ লাইভ বেকারিতে পণ্যের ওপর উৎপাদনের তারিখ বা মেয়াদ উল্লেখ করা হয় না, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। ফলে ভোক্তারা নিশ্চিত হতে পারেন না খাবারটি আসলেই সদ্য তৈরি নাকি পুরোনো। অনেক সময় পুরোনো পাউরুটি বা কেককে আবার ওভেনে গরম করে গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যা বাইরে থেকে একেবারেই নতুন বলে মনে হয়। এতে সাধারণ গ্রাহক বুঝতেই পারেন না আসল পরিস্থিতি কী।
এম/এমআর

