স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, দেশের ভালো সব হাসপাতাল ঢাকায়। যেগুলো জেলা পর্যায়ে আছে সেগুলোও সীমিতভাবে চলছে। জেলাগুলোতে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে ঢাকায় ছুটে আসতে হচ্ছে। আমরা তিন থেকে চারটি রোবটিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করব। এটি জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে মানুষকে কষ্ট করে ঢাকা আসতে না হয়।
রোববার (৩১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আয়োজিত রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
নূরজাহান বেগম বলেন, ৫ আগস্টের পর আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এত আহতদের আমরা কীভাবে সুস্থ করব। তখন দেখলাম রোবটিক চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা এটি কিনে দেশে আনি, তাহলে বিদেশে যেতে হবে না। সেই মতোই আমরা রোবটের ব্যবস্থা করি। চীন থেকে আমরা ৫৭টি রোবট এনেছি এবং চীন থেকেই আমাদের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের এখানকার লোকজনই যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারও ব্যবস্থা করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়াও ওয়েন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সফলভাবে চীন সফর করেছেন। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে চীন চিকিৎসায় সহযোগিতা করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। ভবিষ্যতে চীন আরও সহযোগী হয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সম্প্রতি বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আহতদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। চীনে বাংলাদেশিরা যেন স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা পায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব আরও এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এই প্রযুক্তি দেশের মানুষের জন্য খুবই ভালো হবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত যারা এখনও পঙ্গুত্বের সঙ্গে লড়ছে, তাদের জন্য বিনামূল্যে রোবটিক চিকিৎসাসেবা শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে এই চিকিৎসাসেবা সাধারণ রোগীর জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেবার খরচ রোগীদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে।
![]()
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সায়েদুর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ অন্যান্য অতিথিরা।
রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে বর্তমানে মোট ৫৭টি উন্নতমানের রোবট রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ভিত্তিক। এসব রোবট সুনির্দিষ্ট শারীরিক সক্ষমতা উন্নয়ন, চলাফেরার ভারসাম্য বজায় রাখা, হাতের সূক্ষ্ম কাজের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং ভার্চুয়াল সিমুলেশনভিত্তিক সাইকোলজিকাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রদানে সক্ষম। এছাড়া চীনের সহায়তায় ইতোমধ্যে ২৭ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন।
রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্ট্রোক রোগী, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, জন্মগত বা অর্জিত পক্ষাঘাত, ফ্রোজেন শোল্ডার, নার্ভ ইনজুরি, দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গু, জটিল অর্থোপেডিক কন্ডিশন, সেরিব্রাল পালসি, গিলিয়েন-ব্যারে সিনড্রোম এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা বা বডি স্টিফনেস জনিত সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এসএইচ/এআর

