বাংলাদেশে প্রতিদিন বায়ুদূষণ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু সাড়ে পাঁচ বছর কমেছে। ফলে বায়ুদূষণ এখন বাংলাদেশের মানুষের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এমন খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) ২০২৫। তাদের বার্ষিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মতো জেলাগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এখানে ডব্লিউএইচও মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারলে গড় আয়ু বাড়বে সাড়ে ৬ বছরেরও বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল অঞ্চল। ঢাকার মানুষের গড় আয়ু ডব্লিউএইচও-এর মানদণ্ডে পৌঁছালে প্রায় ৬ দশমিক ৯ বছর বেড়ে যেতে পারে। এমনকি দেশের জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার পূরণ হলেও ঢাকাবাসীর গড় আয়ু বাড়তে পারে অন্তত ৪ বছর।
বাংলাদেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও দেশের নিজস্ব মানদণ্ডের চেয়ে বহুগুণ বেশি। দেশের ১৬ কোটি ৬৮ লাখ মানুষই এমন এলাকায় বাস করছে যেখানে বাতাস ডব্লিউএইচও-এর মানদণ্ডের তুলনায় মারাত্মকভাবে দূষিত। এমনকি দেশের সবচেয়ে কম দূষিত জেলা লালমনিরহাটেও ডব্লিউএইচও-এর মানদণ্ডের চেয়ে সাত গুণ বেশি দূষণ রয়েছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও নীতি ও পদক্ষেপ এখনও খুবই দুর্বল। ঢাকার আশপাশের ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরেই দূষণের প্রধান উৎস হলেও সেগুলো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে পুরোনো বাস-ট্রাক থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার অযাচিত নির্গমন দূষণকে আরও ঘনীভূত করছে।
বিজ্ঞাপন
শুধু দেশীয় উৎসই নয়, প্রতিবেশী দেশ থেকে মৌসুমি ধোঁয়াশাও যুক্ত হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই সীমিত। পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজনীয় জনবল ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, যার ফলে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন দুর্লভ।
১৯৯৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) এর ঘনত্ব বেড়েছে ৬৬ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে গড় আয়ু থেকে আরও ২ দশমিক ৪ বছর কমেছে।
একিউএলআই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বায়ুদূষণ প্রত্যেক বাংলাদেশির জীবন থেকে সাড়ে ৫ বছর কেড়ে নিচ্ছে। এর প্রভাব ধূমপান, অপুষ্টি কিংবা অস্বাস্থ্যকর পানি— সব মিলিয়ে যা হয়, তার চেয়েও বেশি।’
তুলনামূলকভাবে, ধূমপান গড় আয়ু কমায় মাত্র ২ বছর, আর শিশুপুষ্টি ও মাতৃপুষ্টির ঘাটতি কমায় ১ দশমিক ৪ বছর।
একিউএলআই বলছে, এটি কেবল নিয়ন্ত্রণহীনতার ব্যর্থতা নয়, বরং একটি চলমান জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়।
এমআইকে/এফএ

