রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখল নিতে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা জাহিদ হোসেন মোড়লের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানাশ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন শেরেবাংলা নগর থানা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আলিম।
গত শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত ৯টায় এ ঘটনার পরদিন রোববার দিবাগত রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় এই সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
শেরেবাংলা নগর কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আলিম বলেন, হৃদরোগ হাসপাতালে দালাল চক্র এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকরা মিলে একটি সিন্ডিকেট করেছে। সেখানে তারা বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে রোগী নিতে দেয় না। পরে সেই সিন্ডিকেট আমরা ভাঙার চেষ্টা করি এবং শুধু অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা এই অ্যাম্বুলেন্স স্টান্ডটি চালায়। এক বছর যাবৎ শ্রমিক দলের বহিষ্কৃত নেতা হাসান জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী হাসান অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখলে নিতে না পারায় জাহিদ মোড়লকে ডেকে এনে তার নেতৃত্বে হৃদরোগ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দীর্ঘদিন যাবৎ দখল করতে চাচ্ছে।
আব্দুল আলিম বলেন, গত শনিবার রাতে হৃদরোগ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখল নিতে জাহিদ মোড়লের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোক হাসপাতালে আসে। আমি রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে গেলে আমার কাছে রিপন নামে একজন এসে বলে জাহিদ মোড়ল আপনাকে ডাকে। ওই সময় আমি জাহিদ মোড়লের কাছে গেলে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমাকে বলে- “আমি জাহিদ মোড়ল। আমি বহিষ্কার হয়েছি তাতে কী হয়েছে, আমি কিন্তু জাহিদ মোড়ল? একেবারে জানে মেরে ফেলবো।”
কৃষকদলের এই নেতা বলেন, আশেপাশে তখন অনেক লোকজন ছিল। তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি একজন রানিং কৃষক দলের আহ্বায়ক সে আমার গায়ে হাত তুলল। তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি চিনতে পারি। এদের মধ্যে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের রহমত হোসেন জয়, আরমান, শেরে বাংলা থানা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক রিপন, আদাবরের নূর মোহাম্মদ রিয়াদ, রুবেলসহ অজ্ঞাত ও আরো ৪০ থেকে ৫০ জন। পরে আমি রাতে এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানা একটি সাধারণ ডায়েরি করি এবং আজকে থানায় আমি আরো একটি অভিযোগ দায়ের করব।
এদিকে জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী শ্রমিক দলের বহিষ্কৃত নেতা হাসান জানান, ওইখানে আমার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা আছে। মহসিন, রাকিব, জাহিদ এরা আমার লাইন ম্যান এবং চালকসহ চারজনকে মেরে গুরুতর আহত করেছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং এই ঘটনায় আমরা থানায় একটি অভিযোগ করেছি।

যেভাবে ঘটেছিলো অস্ত্র প্রদর্শন ও হামলা:
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা এবং রাতে দুই দফা মারামারি হয় অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে। পরে জাহিদ মোড়ল তার লোকজন নিয়ে এসে কৃষকদলের আহবায়ক আব্দুল আলিম কে মারধর করে। ওই সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি টিম গেলে তারা পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, এখানে শ্রমিক দলের বহিষ্কৃত একজন নেতা হাসান। তিনি সোহরাওয়ার্দী পঙ্গু হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখল করেছেন। এখন তারা হৃদরোগ হাসপাতাল স্টান্ড দখল করার জন্য এখানে জাহিদ মোড়লকে নিয়ে এসে একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটায়। ঘটনার দিন যারা এসেছে আদাবর মোহাম্মদপুর শেরেবাংলা নগর তারা সবাই জাহিদ মোড়লের লোকজন। অবশ্যই জাহিদ মোড়লের এখান থেকে মোটা অংকের টাকা যায়, সেজন্যই সে এখানে এসেছিল। জাহিদ মোড়লের সঙ্গে অস্ত্র ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।
শেরেবাংলা নগর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান হোসেন রিপন বলেন, আমি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার সামনে ছিলাম। পরে শুনতে পারলাম জাহিদ মোড়ল ভাই আসবেন তাই আমি হৃদরোগ হাসপাতলে যাই। আমি যতদূর জানি উনি রোগী দেখতে এসেছিলেন। তবে সন্ধ্যার দিকে একটা মারামারির ঘটনা আমি শুনেছিলাম। ওই সময় বৃষ্টি নামতে ছিল আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম কয়েক মিনিট পরেই দেখলাম জাহিদ মোড়ল ভাই আসছে। আমি কোন মারামারি দেখি নাই। এখানে মূলত হৃদরোগ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড দখল করাকে কেন্দ্র করে মহসিন ও হাসানের মধ্যে ঝামেলা চলছিলো।
তবে এ বিষয়ে যুবদলের বহিস্কৃত নেতা জাহিদ মোড়লের বক্তব্য চেয়ে তার ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ফোন নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ও কল করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) সিরাজুল ইসলাম জানায়, আগে এখানে ফারুক গ্রুপ ছিল। হাসান গ্রুপ এসে তাদেরকে মেরে বের করে দেয়। আমরা তো আর তাদের সঙ্গে মারামারি করতে পারি না। পরে রাতে আবার আরেক গ্রুপ আসছিল। তখন আবার অন্য গ্রুপ ছিল না।
তেজগাঁও বিভাগের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ হোসেন মোড়লকে আমরা খুঁজছি। তবে তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে সে আত্মগোপনে চলে যায়। শুধু পুলিশ নয় তাকে যৌথবাহিনী ও খুঁজছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক জানান, ঘটনার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি এবং এই ঘটনায় এক পক্ষ আমাদের থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং আরেকটি পক্ষ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। দুটি বিষয় খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ হোসেন মোড়লের বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর গত ৩ জুলাই তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করা হয়। এরপর থেকেই জাহিদ হোসেন মোড়ল আত্মগোপনে চলে যান। বহিষ্কারের পরদিন ভোর রাতে সেনাবাহিনী তার বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে জাহিদ হোসেন মোড়লকে পাওয়া না গেলেও অবৈধ ওয়াকি টকিসহ তার বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে সেনাবাহিনী।পরে দেলোয়ারকে মোহাম্মদপুর থানায় গ্রেপ্তার। দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। জাহিদ মোড়লের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, গুলিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ক.ম/

