বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উপদেষ্টার চাওয়া ভিন্ন, নিয়োগ পেয়েও যোগ দিতে পারছেন না মৎস্য সচিব!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

উপদেষ্টার চাওয়া ভিন্ন, নিয়োগ পেয়েও যোগ দিতে পারছেন না মৎস্য সচিব!

 

·       অতিরিক্ত সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে সচিব করতে উপদেষ্টার ডিওলেটার
·       যোগদান করতে না পারলে সচিব পদে আসতে পারে নতুন মুখ
·       দুই সপ্তাহেও সচিবের যোগ দিতে না পারা ঘিরে নানা গুঞ্জন 

সাত মাস শূন্য থাকার পর গত ৩ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে নিয়োগ পান পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতার। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে পারেননি। কবে যোগ দেবেন বা যোগ দিতে পারবেন কি না— এ নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা। ফলে এখনো মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন আছেন সচিবের রুটিন দায়িত্বে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সচিব হিসেবে তোফাজ্জেল হোসেনই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের পছন্দের। তোফাজ্জল হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে এই মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতে উপদেষ্টা আধা সরকারি পত্রও দিয়েছেন। কিন্তু তার সুপারিশের কর্মকর্তাকে নিয়োগ না দেওয়ায় নতুন সচিবের যোগদান করা নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে এই মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব হিসেবে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে। 

 

সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করা তোফাজ্জেল হোসেনকে সচিব হিসেবে চেয়েছিলেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এস এম শাকিল আখতারকে নিয়োগ দেওয়ার পর একটা পক্ষ তার যোগদান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এ কারণে এখনও নতুন সচিব কাজে যোগ দিতে পারেননি।

এদিকে নিয়োগের দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পরও কাজে যোগ দিতে না পারার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরে আলোচনা হচ্ছে। এমন ঘটনাকে প্রশাসনিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকে। এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই পরিস্থিতির জন্য আড়ালে-আবডালে উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলছেন কেউ কেউ।

সচিব নিয়োগ দেওয়ার এত দিনেও যোগদান করতে না পারার বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এখানকার একজন কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আপনারা জানেন এখানে সচিব হিসেবে যাকে দেওয়া হয়েছে তাকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। ওখানে হয়তো নতুন কিছু হবে।’

কবে মন্ত্রণালয়ে যোগ দেবেন এমনটা জানতে এস এম শাকিল আখতারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। 

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নতুন সচিব স্যার এখনও যোগদান করেননি। কবে করবেন তা জানি না। তবে যেদিন নিয়োগ পেয়েছেন সেদিন উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর আর কোনো অগ্রগতি আছে কি না জানি না।’

এদিকে সচিব হিসেবে প্রজ্ঞাপন হওয়ার দিন বিকেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের কাছে শাকিল আখতার যোগদানপত্র জমা দিলেও তা এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

গত বছরের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। এরপর গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে এই মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ না দিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর আকমল হোসেন আজাদকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে বদলি করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের পদটিও সচিব পদমর্যাদার।

ফলে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদটি ফাঁকা। সবশেষ এই মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে সচিব পদে পদোন্নতির পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ১৫ দিন পার হলেও যোগদান করতে পারেননি সচিব এস এম শাকিল।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সচিবের নিয়োগ আটকে দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ভিন্ন পছন্দের বিষয়। তিনি তিন দফায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র পাঠিয়ে বর্তমান অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেনকে সচিব করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

যদিও তোফাজ্জেল হোসেন পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ৩১ নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব, ২০১৩ সালে ২৫ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর ফের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২২ জুন পর্যন্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া চিঠিতে তোফাজ্জেল হোসেন একজন দক্ষ, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তা আখ্যা দিয়ে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলেছেন। চিঠিতে লিখেছেন, ‘তোফাজ্জেল হোসেন রুটিন দায়িত্বে থেকে সচিবের কাজ সঠিকভাবে পালন করছেন। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ের প্রয়োজন হলে সেই পর্যন্ত অন্য কাউকে এই পদে পদায়ন না করে তাকে আপাতত রুটিন দায়িত্বেই রাখা হোক।’ 

এদিকে নিয়োগ পাওয়ার দুই সপ্তাহ পরও সচিব কাজে যোগ দিতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কাজ ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বড় বড় প্রকল্পে সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ রয়েছে।

বিইউ/ক.ম  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর