রাজধানীর কাঁচাবাজারে গত এক সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি খুচরা বাজারে পড়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। বিক্রেতাদের দাবি, টানা বৃষ্টিতে ক্ষেত থেকে সবজি তোলা ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দাম বেড়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শিয়ালবাড়ি, আরামবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা শিমের কেজি এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। করলা, ঢেঁড়স ও বেগুনের কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। গাজরের দাম কেজিতে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙা কেজি ৬০ টাকা, কচুর ডাঁটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় পেঁয়াজের কেজি এখন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ছিল। এছাড়া শসার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আদা কেজি ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, আর রসুন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। এর ফলে পাইকারি দামের সঙ্গে খুচরা দামের ফারাকও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবজির পাশাপাশি প্রোটিনের বাজারেও ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এক ডজন ব্রাউন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২৪০ টাকা। মাংসের বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭৪০ টাকা, খাসির মাংস কেজি ১১০০ টাকা। দেশি মুরগী কেজি ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও দাম চড়া। বড় ইলিশ কেজি ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, ছোট ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা, বড় রূপচাঁদা ১৬০০ টাকা, ছোট রূপচাঁদা ১০০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পাঙ্গাস ৬০০ টাকা, বোয়াল ৯০০ টাকা, তেলাপিয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত অভিযান, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা জরুরি। অন্যথায় মৌসুমি কারণে নয়, সারা বছরই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞাপন
মিরপুর-৬ বাজারে সবজি কিনতে আসা গৃহিণী শামীমা আক্তার জানান, প্রতিদিনের বাজারে এক হাজার টাকা নিয়েও আর তেমন কিছু কেনা যায় না। সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ে না। একই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। মনে হয়, দাম বাড়ানোর জন্যই অনেকে আবহাওয়ার সুযোগ নেয়।
নতুন বাজারে সবজি কিনতে আসা স্কুল শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে কম কিনছি। আগে সপ্তাহে তিন-চার রকম সবজি কিনতাম, এখন দুই রকমেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। তারা ক্রেতাদের অনুরোধ করছেন, মৌসুমি কারণে সাময়িক মূল্যবৃদ্ধি বোঝার চেষ্টা করতে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি তদারকির প্রয়োজনীয়তা বলেও উল্লেখ করেছেন।
মিরপুরের বাজারের পাইকারি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে আছে। ক্ষেত থেকে সময়মতো সবজি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহ কমে গেলে পাইকারি দাম বাড়ে, আর সেখান থেকে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়ে।
শান্তিনগর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, আমাদের হাতে পুরনো স্টক থাকলেও দাম কমিয়ে বিক্রি করলে লোকসান হয়। তার ওপর গ্রামের বাজার থেকে ঢাকায় পণ্য আনার ভাড়া এখন ২০–৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
একই বাজারের বিক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, এখন গ্রামে বৃষ্টি থামলেও কাদা-পানিতে ফসল তোলা ও ট্রাকে তোলা কঠিন। তাই সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমি কারণে দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক হলেও বাজারে স্বচ্ছতার অভাব ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সরকারি তদারকি না থাকলে মৌসুমি অজুহাতে দাম বাড়ানো অব্যাহত থাকবে। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষিজমি ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহে বিলম্ব, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থার একাধিক স্তরে হাতবদলের কারণে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।
এএইচ/এফএ

