শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আন্দোলনের পর আন্দোলন ঠেকিয়েও সমালোচিত সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

আন্দোলনের পর আন্দোলন ঠেকিয়েও সমালোচিত সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতেই চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। একদিকে বছরব্যাপী আন্দোলনের ঢল ঠেকাতে ব্যস্ত সরকার, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। তথ্য বলছে— ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার চলতি এক বছরে মোকাবিলা করেছে প্রায় পৌনে দুইশ’টি আন্দোলন। কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের নানা বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি ও সহিংসতার ঘটনায় জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।

গত বছরের আগস্টে ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন, তখন দেশ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, অর্থনীতি ও সমাজজুড়ে তৈরি হয় শূন্যতা। সেই মুহূর্তে অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দাবি-দাওয়ার পাহাড় জমে ওঠে সরকারের টেবিলে।


বিজ্ঞাপন


রিকশাচালক থেকে সরকারি কর্মকর্তা, কলেজ শিক্ষক থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য—প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে নামেন। কেউ চাকরির দাবিতে, কেউ বদলি বা পদোন্নতির দাবিতে। কেউ আবার কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য আন্দোলনে। এইসব কর্মসূচি একটার পর একটা সামাল দিতে দিতে নাকাল হতে হয় সরকারকে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে আছি, যেখানে মানুষ নিজেদের মতপ্রকাশ করতে পারছে। আগের মতো আন্দোলন করলেই গুলি নয়। এখন জনগণ নিজের কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।

তবে শুধু আন্দোলন সামাল দিয়েই থেমে নেই সমালোচনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি এবং সহিংস অপরাধ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে শুধুমাত্র ডাকাতির সময় খুনের ঘটনায় ৩৯৭টি মামলা হয়েছে। ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটেছে ৭০০টিরও বেশি। সরকার বলছে, আগের বছরের তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। তবে ভুক্তভোগীরা তা মানতে নারাজ। 

আরও পড়ুন

জুলাইয়ে যেসব স্লোগানে কেঁপেছিল হাসিনার মসনদ

শফিকুল আলম বলেন, আমরা মনে করি, বর্তমানে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রয়েছে। ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। শুধু সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ও পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়া—এই দুই বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করে রেখেছে। শুরুতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বদল এবং বর্তমান উপদেষ্টার দক্ষতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন মোটামুটি। তবে শুরুর দিকে অবস্থা ছিল খারাপ। আগের সরকারের কিছু প্রভাবশালী লোক এখনো প্রশাসনে রয়ে গেছে। তারা থেকে গেলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।

দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, মব ভায়োলেন্সের ভয়েই আমাদের অনেক সময় চুপ থাকতে হচ্ছে। সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানলেও প্রকাশ করছে না। আমি একজন সম্পাদক হিসেবে অনেক সময় এমন তথ্য প্রকাশে উৎসাহ দিতে পারছি না। এটা একটা আপসের পরিস্থিতি তৈরি করছে।

শিক্ষক ও গবেষক আসিফ বিন আলী মনে করেন, সরকার আন্দোলন সামাল দিতে পারলেও জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তার মতে, এই ইস্যুতে আরও সক্রিয় হতে হতো।

এদিকে বড় বড় দুর্ঘটনা মোকাবিলাতেও সরকারের সমন্বয়হীনতা চোখে পড়েছে। বিশেষ করে মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনার সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বল প্রস্তুতি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর