ড. ইউনূসকে ছাড়া অন্তর্বতী সরকারের কোনো উপদেষ্টাকে কেউ আর বিশ্বাস করেন না বলে মন্তব্য করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফুল ওসমান বিন হাদি।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাদি বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে তার উপদেষ্টারা আর্মি ক্যু’র ভয় দেখাচ্ছে। এনসিপিকে তারা আন্দোলনের প্রতিনিধি বানিয়েছে। আপনাকে আপার হ্যান্ড নিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করুন, উপদেষ্টা পরিবর্তন করুন।
তিনি আরও বলেন, জেনারেল ওয়াকার ও আর্মি জেনারেলরা ক্যু করতে পারবেন না। তারা যদি এমন কিছু করে জনগণ গিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ইট খুলে নিয়ে আসবে। জনগণ এই উপদেষ্টাদের বিশ্বাস করে না। ড. ইউনূসকে তারা বিশ্বাস করতে চায়।
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতের আশায় উপদেষ্টাদের অনেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আপস করেছেন—এমন অভিযোগ তুলে হাদী বলেন, তারা এখন রাজনৈতিক দলের জবানে কথা বলছেন।
এ সময় সংস্কারের দাবি জানিয়ে হাদি আরও বলেন, যে দলই ক্ষমতায় আসবে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। প্রতিনিধিত্বশীল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। জুডিশিয়াল রিফর্ম করতে হবে, জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের বর্তমান প্যাটার্ন ভেঙে দিতে হবে।
হাদি বলেন, আমাদেরকে উপদেষ্টারা আগে বলেছেন জুলাই ঘোষণাপত্রে গত ২০০ বছরের বাঙালির সব সংগ্রামের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু ঘোষণাপত্রে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের দিনগুলোর স্বীকৃতি দেখতে পাই নি। শাহবাগে মব করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে বিচারিক হত্যাকান্ড ঘটেছে। সেই ঘটনাগুলোর কোনো প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পাই নি। ঘোষণাপত্র পাঠ করার সময় মনে হয়েছে আপনি পড়ে শেষ করতে পারলেই বাঁচেন।
৪৭ এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এসেছে এরপর চূড়ান্ত ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এসেছে। কিন্তু প্রতিটা সময় একটার বিপরীতে আরেকটাকে দাঁড় করানো হচ্ছে। যেই ঐতিহাসিক কর্মগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা নেই, যেখানে অরাজনৈতিক মানুষেরা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কাজ করেছে তার একটাকেও এখানে অ্যাড্রেস (উল্লেখ) করা হয় নায়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যা তারই উদাহরণ, যেগুলোর কোনো স্বীকৃতি নায়।
প্রশ্ন তুলে হাদি বলেন, পিলখানার কথা বললে আর্মি ক্ষেপে যাবে, এ কারণে কি আপনি (অন্তর্বর্তী সরকার) পিলখানার কথা বললেন না? শাপলা গণহত্যাকে অনেকে এখনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান বলে। শাপলাকে বাদ দিয়ে আপনি কোন ফ্যাসিবাদ আবার আনতে চান? নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমাদের বাচ্চারা রক্তাক্ত হয়েছে, কিন্তু তারও স্বীকৃতি ঘোষণাপত্রে নেই। ঘোষণাপত্রে ৪৭ এর স্বীকৃতি, ৭৫ এর স্বাধীনতার পর ১৯৯০ এর অভ্যুত্থানের সাথে পিলখানা, শাপলা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে আপনাকে একনোলেজ (স্বীকৃতি) করতেই হবে।
বিজ্ঞাপন
শরিফ ওসমান হাদি ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বলেন, হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু বলতে হবে হাসিনার পতন ঘটিয়েছে এবং সে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখানে অনেক গুণ ও খুনের কথা আছে কিন্তু বিচারিক হত্যাকাণ্ডের কথা নাই। জামায়াতের যেই নেতাদের ফাঁসি হয়েছে তাঁরা অ্যাডভান্টেজ পাবে এই ভয়ে কি আপনার সে কথাও বলেন নাই? এছাড়া জুলাই সনদে ১৯টি সংস্কারের কথা বলা হলেও ১০টি সংস্কারে বিএনপি ১০টি সংস্কারে 'নোট অব ডিসেন্ট' হিসেবে নিয়েছে, অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে আমি এটা মেনে নিয়েছি কিন্তু আমি একমত না।
নির্বাচন ও ৫টি সংস্কার নিয়ে হাদি বলেন, নির্বাচন হবে কিন্তু রোডম্যাপ কোথায়? নির্বাচনের আগে আপনি ইন্টেরিম ভেঙে দেন এবং আপনি প্রধান হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেন। আপনি কিছু বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে প্রথমে ৭২ এর সংবিধান আগে বাতিল করে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের আলোকে সংবিধান করতে হবে, পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে, জুডিশিয়ারি (বিচারব্যবস্থা) সংস্কার করতে হবে এবং জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে। এসময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নির্বাচনের আগে কয়েকটি সংস্কার করার আহ্বান জানান।
বিইউ/এআর

