বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ৪০ দিনের বন্দি জীবনের দুঃসহ স্মৃতি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২, ১০:২৮ এএম

শেয়ার করুন:

আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ৪০ দিনের বন্দি জীবনের দুঃসহ স্মৃতি

অনেক ঝড়ঝাপটাকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আর একদিন পরই উদ্বোধন। তাই আনন্দভরা মন নিয়ে অপেক্ষায় পুরো জাতি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসীর সঙ্গে যোগ দিতে জার্মান থেকে দেশে আসছেন পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জার্মানের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হলেও এরআগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ এনে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। সে সময় পদ্মা সেতুতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে দুর্নীতি দমন কমিশন যে মামলা করে তাতে প্রধান আসামি করা হয়েছিলো মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে। 


বিজ্ঞাপন


ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ৪০ দিন তাকে কারাগারেও থাকতে হয়েছিল। চাকরি হারানোরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। এখনো ভুলতে পারেননি সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একে একে কেটে বিপদমুক্ত হন এই জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা। দায়িত্ব দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক দপ্তরের। সবশেষ করা হয় জার্মানের রাষ্ট্রদূত।

শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে সুধী সমাবেশে আমন্ত্রণ পেয়ে এতে অংশ নিতে জার্মান থেকে আসছেন মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। পদ্মায় মূল সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময়ও উপস্থিত ছিলেন তিনি। 

সেতু উদ্বোধনের আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা জানিয়ে মোশাররফ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে বলে দিয়েছেন, আমাকে যেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়। আমি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসব।

২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করার পর মোশাররফ হোসেনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। পরের বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জজ আদালত তাকে জামিন দেয়। 


বিজ্ঞাপন


সেসব দিনের কথা মনে করে মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উপর বিরাট অবর্ণনীয় কষ্ট এসে পড়ল। প্রধানমন্ত্রী সেই সময়েই খুব বিরক্ত হয়েছিলেন যে, তার একজন সচিবকে কেন না জানিয়ে অ্যারেস্ট করা হল। মামলা দিছে ঠিকাছে, মামলা চলুক। আমি ৪০ দিনের মতো জেলে ছিলাম। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, আমার ফ্যামিলির উপরে একটা মানসম্মান নিয়ে প্রশ্ন আসে। যাই হোক, সেই সময়তো মেনে নিতে হয়েছিল।

মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ৫ জুন চাকরি ফিরে পান মোশাররফ হোসেন। তাকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য করে সরকার।

পরের বছর পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় দুদক।

পরে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর শিল্প সচিবের দায়িত্ব পান মোশাররফ। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল পদোন্নতি দিয়ে তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়।

২০১৬ সালের ৩০ জুন অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল মোশাররফের। এর একদিন আগে ২৯ জুন তার পিআরএল বাতিল করে এক বছরের চুক্তিতে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্বে রেখে দেয় সরকার।

এরপর দুই বছরের চুক্তিতে এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন মোশাররফ হোসেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে তাকে জার্মানিতে পাঠানো হয়। এখনও তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন।

এমন বিপদকালে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা পাওয়ার কথা এখনো স্মরণ করেন এই কর্মকর্তা। 

তিনি বলেছেন, আমার চাকরি যাওয়ার পরও যে সময়গুলি আমার জীবন থেকে নষ্ট হয়েছে, সেগুলি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসাতে আমার যে কর্মদক্ষতা, সেটা আমি প্রমাণ করতে পেরেছি। উনি আমাকে পোস্টিং দিয়েছেন। সিভিল সার্ভিসে যদি কেউ লাইনচ্যুত হয়ে যায়, সে আর উঠে আসতে পারে না। আমি মনে করি, আল্লাহর বিশেষ রহমত আমার উপরে, মানুষের দোয়া- সেই হিসাবে আমি সবটাতে ফিরতে পারলাম।

পদ্মা সেতু ঘিরে ঘটনাপ্রবাহ ও নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বইটির শিরোনাম ‘পদ্মা সেতু: সততা ও আত্মবিশ্বাসের বিজয়’। 

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর