শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো তরুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২, ০৩:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো তরুণ
ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎ পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের (মাতারবাড়ি-২) কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও জাপান সরকার। উভয় দেশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদী যুব সংস্থা ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। একই সঙ্গে দুই দেশের এই সিদ্ধান্তকে জলবায়ু সুবিচারের জন্য বড় বিজয় হিসেবে দেখছে তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের জাতীয় সমন্বয়ক শাকিলা ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


এতে বলা হয়, জলবায়ু প্রতিশ্রুতি বিবেচনা করে মাতারবাড়ি-২ প্রকল্প বাতিল করা বাংলাদেশ ও জাপানের বড় সিদ্ধান্ত। এটি বৈশ্বিক জলবায়ু আন্দোলনের জন্য বিশাল বিজয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও জাপানের যুব, তৃণমূল এবং নাগরিক গোষ্ঠীর জন্য। যারা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জরুরি জলবায়ু পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। 

এতে আরও বলা হয়, গত ২২ জুন জাপান সরকার ইন্দোনেশিয়ার ইন্দ্রমায়ু ও বাংলাদেশে মাতারবাড়ি-২ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ ঘোষণা করেছে। জি৭-এর ২০২১ সালের মধ্যে নতুন অবিচ্ছিন্ন কয়লা বিদ্যুতে অর্থায়ন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি ও নতুন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে জাপানের পিছিয়ে থাকা নাগরিক সংস্থা এবং তরুণদের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের মুখে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে প্রকল্প দুটির অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে দেশটি।

এদিকে জাপানের ঘোষণার পর, বিতর্কিত মাতারবাড়ি-২ কয়লা প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে মাতারবাড়ি-২ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জায়গায় এলএনজি পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এ অবস্থায় কয়লা ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) স্থানান্তর না করে শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে ন্যায্য রূপান্তর করে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তরুণ জলবায়ুকর্মীরা। তারা কয়লা ও এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে দূষণ না করে বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করার জন্য জাপানের মতো ধনী দেশগুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


গত দুই বছর ধরে তরুণদের নেতৃত্বে জলবায়ু ধর্মঘট ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্প্রসারণ বন্ধের চাপ দিয়ে আসছিল ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। 

জিমরান মো. সাইক একজন জলবায়ুকর্মী। কক্সবাজারের সচেতন এই তরুণ বলেন, “ইতোমধ্যে একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষার ভিত্তিতে অর্ধনির্মিত মাতারবাড়ি-১ প্রকল্পের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এতে হাজারো মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, জীবিকা হারিয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়েছে। এটি মানবাধিকার, প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্রকে হুমকিতে ফেলার পাশাপাশি স্থানীয় কোহেলিয়া নদীকেও দূষিত করছে। কয়লা থেকে এলএনজিতে স্থানান্তরে ‘যেই লাউ সেই কদু’র মতো অবস্থা হবে।”

ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সোহানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। দায়ী না হয়েও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা প্রতি বছর সর্বোচ্চ মাত্রায় ক্ষয়-ক্ষতির মূল্য পরিশোধ করছি। মাতদৃভূমির পাশাপাশি আমাদের মতো তরুণদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইতোমধ্যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাপানের মতো ধনী দেশগুলোর উচিত ক্ষতিপূরণ এবং জলবায়ু অর্থায়নের পাশাপাশি ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা।’

সোহানুর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য কয়লা পর্যায়ক্রম বন্ধ করে জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় এলএনজির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য উৎসে রূপান্তর করে একটি গ্রিন নিউ ডিল গ্রহণের সময় এসেছে। কয়লা কিংবা এলএনজির মতো অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বাড়ানোর দাবি জানাই।’

টিএই/এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর